শান্তুনু কর, জলপাইগুড়ি : স্টেথোস্কোপ হাতেই হয়তো বেশি মানাতো তাঁকে। কিন্তু এক দশকের বেশি সময় ধরে স্টেথোস্কোপ ছেড়ে দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী সংগ্রহের নেশায় মেতেছেন জলপাইগুড়ির বাসিন্দা ডাক্তার বিক্রমসিংহ বসুমাতা। সকাল সকাল তাঁর দেশবন্ধুপাড়ার মালি বাগানের বাড়িতে গেলে সবজি বিক্রেতার মতো এক পাল্লায় সবজি মাপতে দেখলেও অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কারণ বর্তমানে এই একপাল্লার তুলাযন্ত্রের পরীক্ষাতেই মগ্ন ডাক্তারবাবু।
১৯৮৮ সালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে উত্তীর্ণ হয়ে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন বিক্রমসিংহ বসুমাতা। জলপাইগুড়ি শহরে বসবাস করলেও আদতে ভুটান সীমান্ত ঘেষা শামুকতলাতেই জন্ম ওই চিকিৎসকের। ২০০১ সালে ডাক্তারি ছেড়ে স্বাস্থ্য প্রশাসনের কাজে যোগ দেন তিনি। বর্তমানে তিনি জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। সেই সঙ্গে জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের আঞ্চলিক লেপ্রোসি আধিকারিকের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে, চিকিৎসা করতে করতেই সংগ্রহের নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। কিছুদিন আগে জন্মভিটেতে ঘুরতে গিয়ে একটি বাড়িতে থাকা প্রাচীন তুলাযন্ত্রটি অবাক করেছিল তাঁকে। তাঁর দাবি, “ পাঁচশো থেকে ছয়শো বছর আগে এই পাল্লার আবিষ্কার করেছিলেন আদিবাসীরা। ইংরেজ আমলে ঝাড়খণ্ড, ছোটনাগপুর এলাকায় বসবাসকারী সাঁওতালদের একটা অংশ চলে আসে জলপাইগুড়ির ডুয়ার্স অঞ্চলে।” তাঁদের হাত ধরেই একপাল্লার ওজন মাপার যন্ত্রটি এই অঞ্চলে চলে আসে বলে দাবি ডাক্তারবাবুর।
বিক্রমবাবু জানান, “সাধারণত দাঁড়িপাল্লা বলতে আমরা জানি দুটো পাল্লা। কিন্তু এই তুলাযন্ত্রটিতে একটিই পাল্লা। এখানে বাটখারার কোনও প্রয়োজন নেই। আলু, পিঁয়াজ, লঙ্কা যাই রাখা হোক দণ্ডের এক প্রান্তে রাখা সুতো ওজনের পরিমাণ বলে দেবে। আর তা এতটাই নির্ভুল আধুনিক যেকোনও পাল্লায় তুললে একই ওজন পাওয়া যাবে।” আপাতত নিজের সংগ্রহশালাতেই পাল্লাটিকে সযত্নে রেখেছেন ডাক্তারবাবু। তিনি জানান, প্রাচীন এই ওজন মাপার যন্ত্রটিকে সকলের সামনে উপস্থিত করতেই নিজের সংগ্রহশালায় এনে রাখা। আর তা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন উৎসাহী বাসিন্দারাও। প্রাচীন এই আবিষ্কারকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই এখন তাঁর লক্ষ্য, এমনটাই জানান ওই চিকিৎসক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.