বিক্রম রায়, কোচবিহার: দূরে বদলির জেরে অবসাদ। বাড়ি থেকে প্রায় কয়েকশো কিলোমিটার দূরে কাজ করতে আর মন লাগছিল না। তাই নিলেন চরম সিদ্ধান্ত। অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে হাতের শিরা কেটে আত্মঘাতী হলেন চিকিৎসক। কোচবিহারের লজ থেকে উদ্ধার হল কলকাতার বাসিন্দা ওই চিকিৎসকের রক্তাক্ত দেহ। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কোচবিহারে। অকুস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখানে লেখা রয়েছে তাঁর শেষ ইচ্ছাও। মৃত্যুর পর যেন নশ্বর দেহ কাজে লাগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে। তাই তাঁর মরদেহ হাসপাতালে দান করার ইচ্ছা লিখে গিয়েছেন তিনি।
বালিগঞ্জের হাজরা রোডের বাসিন্দা শ্রবণ কান্তি (৩৮)। কোচবিহার গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকায়াট্রি বিভাগের চিকিৎসক। তিন মাস আগে কলকাতা থেকে ট্রান্সফার হয়ে আসেন এখানে। প্রথমে কোচবিহার শহরের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন বাড়ি থেকে দূরে থাকায় আর মন লাগছিল না তাঁর। মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। দিন তিনেক আগে ভাড়াবাড়িতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু ব্যর্থ হন। বাড়িওয়ালা তাঁকে পত্রপাঠ বিদায় নিতে বলেন। তারপর কোচবিহার শহরেরই একটি লজে গিয়ে ওঠেন তিনি। পুলিশের অনুমান, শুক্রবার রাতে বাঁ-হাতের শিরা কেটে আত্মঘাতী হন তিনি। শনিবার সকালে তাঁর ঘর থেকে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশ ডাকে লজ কর্তৃপক্ষ। তারপরই বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার হয় ওই চিকিৎসকের দেহ। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল শোয়ার খাট। বাঁ-হাতের কবজিতে গভীর ক্ষত দেখেই আত্মহত্যার ব্যাপারে অনুমান পুলিশের। ঘর থেকে উদ্ধার হয় সুইসাইড নোটও।
সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন, নিজের ইচ্ছাতেই আত্মহত্যা করছেন। কেউ তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী নয়। কলকাতা থেকে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে বদলির জন্য মানসিক অবসাদের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। নিজেকে শেষ করার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, এছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না তাঁর কাছে। যোগাযোগ করার জন্য অমিত নামে তাঁর এক আত্মীয়ের ফোন নম্বর লিখে গিয়েছেন শ্রবণ। পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে তাঁর দেহ ব্যবহার করার ইচ্ছা জানিয়ে গিয়েছেন তিনি। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। ওই চিকিৎসকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চিকিৎসকের মর্মান্তিক পরিণতিতে শোকের ছায়া সহকর্মীদের মধ্যে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.