রিন্টু ব্রহ্ম,কালনা: চিকিৎসক নিগ্রহে এরাজ্যের ছবিটা খুব একটা আলোকিত নয়৷ সম্প্রতি এনআরএসে ডাক্তারকে মারধরের ঘটনার প্রভাব এখনও টাটকা সকলের স্মৃতিতে৷ তবে এর মধ্যেই উলটপুরাণ৷ কালনা মহকুমা হাসপাতালে এবার ডাক্তারের সঙ্গে অভব্য আচরণ করার প্রতিবাদ করলেন রোগীর আত্মীয়রাই। এমনকী মারমুখী রোগীর আত্মীয়কে হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকেও বের করে দেন তাঁরা।
রবিবার সকালে হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন বিভাগে রোগী দেখতে যান চিকিৎসক কুণাল হালদার। অন্যদিনের তুলনায় রোগীর চাপ এদিন একটু বেশি ছিল৷ তার উপরে বাড়তি রোগীর আত্মীয়রাও ঢুকে পড়েছিলেন ওয়ার্ডে। ফলে রোগীর দেখতে সমস্যা হচ্ছিল তাঁর। তাই তিনি কর্মরত নিরাপত্তারক্ষীদের বলেন, বিভাগে জমায়েত করা অতিরিক্ত লোকজনকে বাইরে বের করে দিতে। রোগী দেখা হয়ে গেলে, আবার তাঁরা ঢুকতে পারবেন।
অভিযোগ, একথা শুনেই কালনার নিভুজি এলাকার এক বাসিন্দা ওয়ার্ডে ঢোকার জন্য গন্ডগোল পাকান। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়৷ তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি৷ তিনি কিছুই শুনতে চাননি বলে অভিযোগ৷ বচসা, ধাক্কাধাক্কি থেকে পরিস্থিতি ক্রমশঃ উত্তপ্ত হতে শুরু করে। গোলমাল হচ্ছে দেখে এগিয়ে যান ডাক্তার কুণাল হালদারও। তিনিও রোগীর আত্মীয়দের বোঝানোর চেষ্টা করেন।তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন রোগীর আত্মীয়। অভিযোগ, কুণালবাবুকে হুমকি দিতে থাকেন ওই ব্যক্তি। এমনকী ওই ব্যক্তি এই মন্তব্যও করেন, ‘এই জন্যই ডাক্তাররা মার খায়।’ তাঁর স্ত্রীও চিকিৎসকের সঙ্গে বিবাদ শুরু করেন। এসব দেখেশুনে কুণালবাবু উত্তর দেন, ‘ঠিক আছে, তাহলে আমাকেও আপনারা মারুন।’ রোগীর ওই আত্মীয় মারমুখী হয়ে উঠলে, ধুন্ধুমার পরিস্থিতির জেরে বন্ধ হয়ে যায় রোগী দেখা৷
এরপরই ওই বিভাগে থাকা অন্য রোগী ও রোগীর আত্মীয়রা এগিয়ে এসে চিকিৎসকের পাশে দাঁড়ান। তাঁরাই বের করে দেন অভব্য আচরণকারী রোগীর আত্মীয়কে। চিকিৎসক হেনস্থার তীব্র প্রতিবাদে সরব হন অন্যান্য অসুস্থ ব্যক্তিরাও। ওই ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে ক্ষমা চেয়ে নেন তাঁর স্ত্রী। ঘটনার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়তেই কিছুক্ষণের মধ্যে হাসপাতালে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বড়াই বলেন, ‘সাধারণত কিছু সংখ্যক মানুষই এই ধরণের ঘটনা ঘটান। তবে মানুষ সচেতন হচ্ছেন। তাঁরাই চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এটি খুবই ভাল দিক।’ সেইসঙ্গে তিনি এও জানান, কারও কোনও অভিযোগ থাকলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাতে৷
এনআরএসে চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে রাজ্য। কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা মেটান। এদিন কালনা হাসপাতালে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা ঘটতে চলেছিল। কিন্তু অন্য রোগীর আত্মীয়রা এগিয়ে এসে তা রুখে দিলেন। রাজ্য অন্য নজির হয়ে থাকল এদিনের ঘটনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.