অভিরূপ দাস: গোটা গ্রামে চোখের ডাক্তার একজনই। করোনা আতঙ্কে সিংহভাগ প্রাইভেট চেম্বার যখন বন্ধ। মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেননি ডা. শুভেন্দু ভাণ্ডারী। হাওড়ার দেউলটির অপথ্যালমোলজিস্ট সকাল-বিকেল রোগী দেখেছেন। ফিরিয়ে দেননি কাউকে। জুনের ১৪ তারিখের ঘটনা, হঠাৎই একদিন প্রবল শ্বাসকষ্ট। বুঝতে পেরেছিলেন ভাইরাসের অনুপ্রবেশ ঘটে গিয়েছে। তারপর? স্ত্রী মনীষা ভাণ্ডারী জানিয়েছেন, ‘ভয় পাননি। রোগীরাই ছিল ওর ধ্যান-জ্ঞান। আমাদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে আরও একটা লড়াই শুরু করে। করোনার (COVID-19) বিরুদ্ধে।’ গত ২৫ জুন যে লড়াইয়ের শেষ। মাত্র উনষাটেই ভাইরাসের কাছে হার মানলেন চিকিৎসক।
ভাইরাসের ভয়ে যখন রুগী দেখা কার্যত শিকেয়। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাননি তাঁর স্বামী। বরং রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ার পরে রাতে দু’ঘন্টা বাড়তি চেম্বার করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কাছে স্ত্রীর আকুতি, “কোনও আর্থিক সাহায্য নয়, ওঁকে কোভিড শহিদের সম্মান দিন।” আর এখানেই বেধেছে গন্ডগোল। আবেদন জানিয়ে হাওড়া মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠি লিখেছেন মনীষাদেবী। সূত্রের খবর, সেখান থেকে জানানো হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসককে এই সম্মান জানানোর রীতি নেই। প্রসঙ্গত, এর আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন স্বাস্থ্যদপ্তরের আধিকারিক ডা. বিপ্লবকান্তি দাশগুপ্ত। সে সময়ও চিকিৎসকরা দাবি জানিয়েছিলেন তাঁকে কোভিড মার্টারস বা করোনা শহিদ উপাধি দেওয়ার জন্য। এমন প্রস্তাব নাকচ করে দেয় স্বাস্থ্যদপ্তর।
চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলায় না পেলেও প্রতিবেশী বাংলাদেশে করোনায় মৃত চিকিৎসকরা যথাযথ সম্মান পাচ্ছেন। করোনায় মারা যাওয়া দেশের প্রথম চিকিৎসক ডা. মহম্মদ মইনুদ্দিনের নামে ‘শহিদ ডাক্তার’ মহম্মদ মইনুদ্দিন ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়েছে সে দেশে। সম্প্রতি কোভিড ওয়ারিয়র-এর ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গে করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের সবেতন করোনা চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করার কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকার। এরজন্য জেলায় জেলায় তৈরি হবে কোভিড ওয়ারিয়র ক্লাব। মৃত চিকিৎসকের স্ত্রী-র দাবি, “কোভিড শহিদ হিসেবে আমার স্বামীর নাম ঘোষণা করা হলে অন্যান্য চিকিৎসকরাও এই সময়ে কাজ করতে উৎসাহ পাবে।”
এমন দাবির পাশেই দাঁড়িয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম। সংগঠনের তরফ থেকে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক ডা. কৌশিক চাকি বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আগেও আমরা দাবি নিয়ে গিয়েছি। এই দাবিটি অত্যন্ত মানবিক। চিকিৎসকরা এই মুহূর্তে ভয়ঙ্কর এক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করছেন। ডা. ভাণ্ডারীকে করোনা শহিদ সম্মান দেওয়া হলে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল বাড়বে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.