ধীমান রায়, কাটোয়া: রাঢ় বাংলার ডোকরা শিল্প বিখ্যাত৷ দেবদেবীর মূর্তি থেকে গয়না, ঘর সাজানোর রকমারি জিনিস – ডোকরার হাত ধরে এসব ঢুকে পড়েছে বাঙালির ঘরে ঘরে৷ এমনকী সুদূর বিদেশেও ডোকরা শিল্প সমাদৃত৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই কুটিরশিল্পের বিবর্তনও ঘটেছে৷ তবে সাম্প্রতিক পরিবর্তনটি চোখের সামনে দেখে প্রাথমিকভাবে বিশ্বাস নাও হতে পারে৷ মূর্তি ছেড়ে ‘গ্রেনেড’ তৈরি করছেন আউশগ্রামের ডোকরা শিল্পীরা।
চমকে উঠলেন? কিন্তু এটাই বাস্তব৷ দেশজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে লোকসভা নির্বাচন। তাই প্রত্যন্ত গ্রামের কুঁড়েঘরে তৈরি হচ্ছে গ্রেনেড৷ তাও আবার ডোকরা শিল্পীদের হাতে। একথা শুনে চমকানোর কিছু নেই৷ আউশগ্রামের দ্বারিয়াপুরের শিল্পীরা লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে গ্রেনেড তৈরি করছেন না। ডোকরা শিল্পীদের গ্রেনেডের মডেল তৈরি করতে বরাত দিয়েছেন বর্ধমান আর্ট কলেজের এক শিল্পী। ওই মডেল গ্রেনেডগুলি তাঁরা এক্সিবিশনের কাজে ব্যবহার করবেন বলে জানা গিয়েছে।
[ আরও পড়ুন: প্রেমের সম্পর্কে ‘বাধা’ পরিবার, আত্মঘাতী যুগল!]
আউশগ্রামের দ্বারিয়াপুর ডোকরা শিল্পীদের গ্রাম বলে পরিচিত। প্রায় ৬০টি পরিবারের বসবাস। তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই ডোকরা মূর্তি তৈরির পেশায় যুক্ত। ভোরের আলো ফুটতেই দ্বারিয়াপুর গ্রামে ঘরে ঘরে উনুন জ্বেলে গ্রামবাসীরা শুরু করে দেন মূর্তি তৈরির কাজ। সারাদিন মূর্তি তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। দ্বারিয়াপুরের প্রবীণ শিল্পী রামু কর্মকার ডোকরা শিল্পে দক্ষতার জন্য কয়েক বছর আগে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাঁর ছেলে শুভ কর্মকার ও স্ত্রী সাধনাদেবীকে দেখা গেল, ধাতুর গায়ে ছেনি, হাতুড়ি লাগিয়ে গ্রেনেডের মডেল তৈরির কাজে ব্যস্ত। এই দৃশ্য দেখে অনেকেই চমকে উঠবেন। তবে জিজ্ঞাসা করার আগেই শুভ কর্মকারের উত্তর, ‘ভয় পাচ্ছেন? এগুলি আসল গ্রেনেড নয়। মডেল মাত্র। বর্ধমানের আর্ট কলেজের শুভেন্দু পাত্র নামে এক ছাত্র এগুলি তৈরি করতে বরাত দিয়েছেন। এপ্রিলের ১৫ তারিখের মধ্যে ২০টি গ্রেনেডের মডেল তৈরি করে দিতে হবে।’ শুভ জানিয়েছেন, প্রতি পিস মডেল গ্রেনেডের দাম ৪০০ টাকা৷
[ আরও পড়ুন: চেকের বিনিময়ে ভোট কেনার অভিযোগ, কাঠগড়ায় বিজেপি]
কিন্তু কেন এতগুলি মডেল গ্রেনেড চাইলেন আর্ট কলেজের ছাত্র শুভেন্দু পাত্র? এর জবাবও মিলল৷ তিনি বলেন, ‘১৭ এপ্রিল আমরা কয়েকজন মিলে একটি এক্সিবিশন করতে চলেছি। সেখানেই এই নকল গ্রেনেডগুলি রাখা হবে।’ শুভেন্দুবাবু আরও বলেছেন, ‘আগেকার দিনে এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের খাদ্য, বস্ত্র বা অন্যান্য সামগ্রীর বিনিময় হত। এখন অস্ত্র বিনিময় হয়। অস্ত্রই নির্ণয় করে দেয় কোন দেশ কতটা শক্তিশালী। অস্ত্রের উৎপাদনই মানব সভ্যতাকে যুদ্ধে প্ররোচিত করে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত সমগ্র মানবজাতি। আমরা গ্রেনেডের মডেল প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে বিশ্বশান্তির বার্তা তুলে ধরতে চাই৷’ ডোকরার তলোয়ার, কামান দেখতে অভ্যস্ত থাকলেও, গ্রেনেডের মতো অস্ত্র এই প্রথম তৈরি হল বলে জানাচ্ছেন শিল্পীরা৷
ছবি: জয়্ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.