গৌতম ব্রহ্ম: ‘সেফ ড্রাইভ টু এ পেন ফ্রি লাইফ’। ব্যথা নামক অসুখের হাত থেকে বাঁচতে এই স্লোগানই হয়ে উঠবে ‘প্রতিষেধক’। এই বিশ্বাসে ভর করেই স্বামী-কন্যাকে নিয়ে বিশ্ব পরিক্রমায় বেরোচ্ছেন কলকাতার এক ব্যথা-বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
কখনও এভারেস্টের বেস ক্যাম্প, কখনও আবার সমুদ্রতলের ১৫০ মিটার নিচে তুরপানে। কখনও আবার চিনের প্রাচীরের শেষ প্রান্তে। কখনও বরফ, কখনও ধু ধু মরু। ২৯টি দেশ পরিক্রমা করে ব্যথার পাঠ শেখাবেন হিন্দমোটরের ডা. দেবাঞ্জলি রায়। প্রায় ১২০ দিনের সফর। মোটর গাড়িতে ৪০ হাজার কিমি পথ পাড়ি দিয়ে গড়বেন নতুন নজির। কখনও উজবেকিস্তানের শ্রমিক কলোনিতে গিয়ে কাজ করার ব্যথা-মুক্ত মুদ্রা শেখাবেন। কখনও আবার সুইজারল্যান্ডের স্কুলে গিয়ে শিশুদের ব্যথা নিয়ে অভিভাবকদের ক্লাস নেবেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এই প্রাক্তনী।
[ মহম্মদবাজারে তৃণমূল কর্মীর রহস্যমৃত্যু, উদ্ধার বস্তাবন্দি দেহ ]
১৭ আগস্ট যাত্রা শুরু। ‘স্পনসর’ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই স্বপ্নপূরণের হাতছানিতে বিশ্ব ভ্রমণে বেরোচ্ছেন দেবাঞ্জলি। সফরসঙ্গী হচ্ছেন স্বামী কৌশিক রায় ও চার বছরের কন্যা দিয়াসিনি। রাস্তা সাহায্য করবে, মানুষ সাহায্য করবে, এই ভরসাতেই ভুবনডাঙা সফরের এমন দুঃসাহসী পরিকল্পনা। দেবাঞ্জলি জানালেন, “পরিক্রমার নাম ‘ওডিসি’। দীর্ঘ ৪০ হাজার কিমি পথ মোটরগাড়িতেই পাড়ি দেবেন। নিজেরাই পালা করে স্টিয়ারিংয়ের সামনে বসবেন। সহযোগিতায় ‘অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’, ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর স্টাডি অফ পেন’, ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ অ্যানাস্থেশিওলজিস্ট’, ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অফ পেন (আইএএসসি)।
দীর্ঘ যাত্রাপথে ব্যথা কমানোর মন্ত্র শেখাবেন বিভিন্ন মানুষকে। সুইজারল্যান্ডের কয়েকটি স্কুলের অভিভাবকদের নিয়ে ক্যাম্প করবেন। শিশুদের ব্যথা কমানোর উপায় বাতলে দেবেন। মহিলাদের লো ব্যাক পেন নিয়েও শিবির করবেন। উজবেকিস্তান, কাজাকিস্তানের শ্রমিক কলোনিতে কর্মীদের কাজ করার বৈজ্ঞানিক মুদ্রা দেখাবেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে যে চারটি রোগ গোটা বিশ্বকে ধ্বংস করে দিতে পারে তার মধ্যে অন্যতম ‘রোড ট্র্যাফিক অ্যাকসিডেন্ট’। পথ নিরাপত্তা নিয়ে তাই হু চিন্তিত। এই পরিস্থিতিতে দেবাঞ্জলির ওডিসি প্রকল্প পথ নিরাপত্তায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই জানিয়েছেন ইএসআই পেন ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের কোর্স অধিকর্তা ডা. সুব্রত গোস্বামী। সুব্রতবাবু এই সাহসী অভিযানের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেবাঞ্জলিকে। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অটোমোবাইল ক্লাবের সভাপতি মদন মিত্র ও সম্পাদক সুবীর মজুমদারও।
[ যানজট ছাড়াতে গিয়ে প্রহৃত হোমগার্ড, রামপুরহাটে উত্তেজনা ]
দেবাঞ্জলির স্বামী কৌশিক রায় ব্যবসাদার মানুষ। গাড়ি চালানোটা নেশা। বহু র্যালিতে অংশ নিয়েছেন। দেবাঞ্জলি জানালেন, “গাড়ির চালানোর নেশা আমার শ্বশুরমশাই চন্দ্রকান্ত রায় ধরিয়েছেন আমার স্বামীকে। ছোটবেলা থেকেই ওনারা গাড়ি নিয়ে গোটা দেশ চষে বেড়িয়েছেন। প্রচুর র্যালি করেছেন কৌশিক। চার বছরের দিয়াসিনিও গাড়ি চেপে দূরযাত্রায় অভ্যস্ত।” দেবাঞ্জলি জানালেন, “আমরা শেষ কবে ট্রেনের টিকিট কেটেছি তা ভুলে গিয়েছি। আমি যখন বাঁকুড়া মেডিক্যালে পোস্টিং ছিলাম তখন আমার মেয়ে কলকাতা থেকে বাবার সঙ্গে গাড়ি চেপে বাঁকুড়া যেত।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.