সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার পিছিয়ে পড়া ২৯০ গ্রামকে ‘পাখির চোখ’ করে সাতটি কাজের ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ দিয়ে এবার বিডিওদেরও ব্লকে পাঠাচ্ছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে গত সোমবার এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক। ওইদিনই জেলার কুড়িটি ব্লকের বিডিওদের নিয়ে এই বৈঠক করে ওই গ্রামগুলির তালিকা দিয়ে সাত কাজের খতিয়ানও তুলে ধরা হয়। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, “জেলা প্রশাসনের এই ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচির ব্যাপক সুফল পাচ্ছি আমরা। তাই এই কাজের আরও বিস্তার ঘটাতেই জেলার পিছিয়ে পড়া ২৯০ গ্রামকে চিহ্নিত করে সাত কাজের তালিকা দিয়ে বিডিও-সহ ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদেরও আলাদা ভাবে নামানো হচ্ছে।”
জানা গিয়েছে, আগামী শুক্রবার থেকে একযোগে জেলার কুড়িটি ব্লকে এই কাজ শুরু করে দেবে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। সূত্রের খবর, জেলাশাসক ও তার দল যেভাবে ফি শুক্রবার দুপুরে জেলা থেকে রওনা হয়ে একটি নির্দিষ্ট ব্লকে গিয়ে ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচি নেয়। বিডিও-সহ ব্লকের আধিকারিকদের এই কাজও কিছু রকমভেদে প্রায় একই। জানা গিয়েছে, জেলা প্রশাসনের ‘গো টু ভিলেজ’-এ শুক্রবার ব্লক প্রশাসনকে নিয়ে বৈঠকে কাজ নিয়ে তদারকি হবে। তারপর সেই ব্লকে রাত কাটিয়ে পরের দিন অর্থাৎ শনিবার গ্রামে পাঠানো হবে। বিডিওদের প্রতি সপ্তাহের কর্মসূচিতে রয়েছে একশো দিনের কাজ, গণবন্টন, মিড-ডে মিল, গর্ভবতী-প্রসূতি মহিলা-সহ শিশু স্বাস্থ্য, কৃষি-পশুপালন-মাছ চাষ, আনন্দধারা-স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও জাতিগত শংসাপত্র-সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প। এই ‘অ্যাসাইনমেন্ট’-এ কোন গ্রামে বিডিওরা তাঁদের কোন কোন আধিকারিকদের নিয়ে যাবেন সে বিষয়ে বৃহস্পতিবারের মধ্যে জেলাপ্রশাসনের কাছে তালিকা চলে যাবে।
কাজ যথাযথ হয়েছে কিনা সেবিষয়ে তথ্য সম্বলিত ছবিও জেলা প্রশাসনের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে পাঠাতে হবে। জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী স্বাক্ষরতা ও আদিবাসী জনজাতির হারকে সামনে রেখে এই ২৯০ গ্রামকে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। এই চিহ্নিত করার কাজেও একটি মডেল অবলম্বন করা হয়েছে। অর্থাৎ যে সকল গ্রামে স্বাক্ষরতার হার পঞ্চাশ শতাংশের নীচে সেইসঙ্গে আদিবাসী জনজাতির হার ষাট শতাংশের উপর, সেই গ্রামকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। জেলার কুড়িটি ব্লকের ২,৬৬৭টি গ্রামের মধ্যে এই গ্রামগুলিকে ওই ‘ফিফটি-সিক্সটি’ মডেলে তুলে আনা হয়েছে। জানা গিয়েছে, বিডিও বা জয়েন্ট বিডিও-র নেতৃত্বে এই কাজ হবে। তবে এই টিমে থাকবেন একশো দিনের কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক, প্রোগ্রাম অফিসার, গণবন্টনে খাদ্য ও সরবরাহ বিভাগের পরিদর্শক, মিড-ডে মিলে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক, মা ও শিশু স্বাস্থ্যে শিশুবিকাশ উন্নয়ণ প্রকল্পের সুপার ভাইজার ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের এএনএম, কৃষি কাজে সহ-কৃষি অধিকর্তা, কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক, ব্লক প্রাণী সম্পদ বিকাশ আধিকারিক, পশু চিকিৎসা, স্বনির্ভর দলের কাজে মহিলা উন্নয়ন আধিকারিক, গ্রাম সেবিকা এবং জাতিগত শংসাপত্র ও সামাজিক সুরক্ষার কাজে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের পরিদর্শক ও সমাজ কল্যাণ দপ্তরের আধিকারিক। অর্থাৎ এই সাত কাজের ‘অ্যাসাইনমেন্ট’-এ ওই পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলিতে বিডিও বা যুগ্ম বিডিও ছাড়াও যাবেন ১৪ আধিকারিক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.