সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে তো? কার্যত দরজায় কড়া নেড়ে জিজ্ঞাসা করছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক। রবিবার ১৯ নভেম্বর ওয়ার্ল্ড টয়লেট ডে বা বিশ্ব শৌচাগার দিবসের প্রাক্কালে এমনই ছবি পুরুলিয়া (Purulia) জুড়ে ।
বনমহলের এই জেলায় বাম আমলে ঘরে ঘরে শৌচাগার প্রকল্পটি একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর খুব ধীর গতিতে কাজ শুরু হলেও বছর পাঁচেক আগেও এই জেলার ছবিটা ছিল ভীষণই করুন। মিশন ‘নির্মল বাংলা’র বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল ঘরে ঘরে শৌচাগারের বিষয়ে পুরুলিয়ার অবস্থান রাজ্যের নিরিখে বেশ পিছনে। এই নিয়ে বিধানসভায় বিরোধীরা রাজ্যকে কম কটাক্ষ করেনি। বর্তমানে অবশ্য পরিস্থিতিটা বদলেছে।
২০২১-২২ আর্থিক বছরে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন একটি সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়ে জানতে পেরেছে এই জেলায় ৯১ শতাংশ পরিবারে শৌচাগার রয়েছে। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। ওই শৌচাগার সব পরিবার ব্যবহার করে তো? শনিবার পাড়া ব্লকের আনাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সোওয়ার, মাপুডির মতো গ্রামগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার না করার অভিজ্ঞতা হল জেলাশাস- সহ তাঁর টিমের। জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, “শৌচকর্ম সারতে কোনওভাবেই মাঠে যাওয়া যাবে না। মাঠে যাওয়া মানে মৃত্যুর পরোয়ানা।” বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও কেন শৌচালয় ব্যবহার করা হয় না তারও খোঁজ নেন তিনি।
শৌচালয় না ব্যবহার করার বিষয়ে নানান তথ্য উঠে আসে পুরুলিয়ায়। তার মধ্যে একটি রুখাশুখা এই জেলায় পানীয় জলের সংকট। এজন্য জলাশয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসল বিষয় হলো সচেতনতার অভাব। স্পেশাল ড্রাইভে যথারীতি এটিই প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। কিন্তু শৌচালয় ব্যবহার করার জন্য বিপুল প্রচার-প্রসারের পরেও জেলায় এমন পরিস্থিতি কেন?
লোকশিল্পের এই জেলায় মানুষের মনে শৌচাগার ব্যবহার করার বিষয়টি সহজেই গেঁথে দিতে ঝুমুর, বাউল অবলম্বন করেও প্রচার চালানো হয়। কিন্তু তারপরও সচেতনতা ফেরেনি। সেই কারণেই ওয়ার্ল্ড টয়লেট ডে-র প্রাক্কালে স্পেশাল ড্রাইভ পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এই স্পেশাল ড্রাইভে জেলাশাসক ছাড়াও রয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) আদিত্যবিক্রম মোহন ইরানি, আরেক অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) রাজেশ রাঠোর ও শৌচাগার বিষয়ে দায়িত্বে থাকা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের উপসচিব জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.