ফাইল ছবি
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সাধারণের জন্য বরাদ্দ চাল কেটে নেন রেশন ডিলাররা৷ জেলা প্রশাসনের ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচিতে গিয়ে আমজনতার কাছে এই অভিযোগ শুনেছিলেন স্বয়ং জেলাশাসক৷ আর তারপরই তিনি এর সমস্যা সমাধানের উপায় বের করেছেন৷
পুরুলিয়ায় রেশন ডিলারদের এই বেনিয়ম রুখে দেবে স্বনির্ভর গোষ্ঠী। তাঁরাই বিভিন্ন গ্রামের রেশন দোকানগুলিতে আচমকা হানা দিয়ে ডিলারদের কারচুপি ধরবেন। নিয়ম মেনে রেশন দোকান খুলছে কি না, সেটাও গ্রামে-গ্রামে নজরদারি চালিয়ে দেখবে এই দল। শুক্রবার স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে নিয়ে তৈরি পুরুলিয়ার ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সংঘদের নিয়ে বৈঠকে এমনই ঘোষণা করেছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার।
গত সপ্তাহেই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচিতে বান্দোয়ানে গিয়ে রেশনের বেনিয়ম হাতেনাতে ধরেছিলেন জেলাশাসক। একের পর এক গ্রাম ঘুরে বুঝেছিলেন, রেশন ডিলাররা দরিদ্র মানুষজনের বরাদ্দকৃত চাল থেকে কিছুটা কেটে নিচ্ছেন। যা নিয়ে ক্ষোভ বিস্তর। কিন্তু রেশন ডিলাররা তাঁদের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেবেন, এই আশঙ্কায় বঞ্চিতদের প্রতিবাদ দানা বাঁধতে পারেনি। ‘গো টু ভিলেজ’–এ পুরুলিয়ার জেলাশাসক এবং আধিকারিকদের সামনে পেয়ে সেই ক্ষোভ উগরে দেন গ্রামবাসীরা। রেশন পরিষেবায় এমন বেনিয়ম শুনে কার্যত হতবাক হয়ে যায় প্রশাসন। এই জেলার একাধিক ব্লকে গ্রাহকদের একাংশের থেকে একশ, দুশো গ্রাম করে চাল কেটে নেন রেশন ডিলারদের একাংশ, সম্প্রতি এই তথ্য হাতে আসায় সমাধানে তৎপর হয়ে ওঠে প্রশাসন৷
২০১৮এ বাঘমুন্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো এই চাল কাটা নিয়ে জেলার পাশাপাশি সরব হয়েছিলেন বিধানসভাতেও। কিন্তু সেসময় পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন বিষয়টি সেভাবে কানে তোলেনি৷ আর তার জেরেই তলে তলে রেশন সংক্রান্ত রোষ দানা বাঁধে জঙ্গলমহলের এই জেলায়। সেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে না এলেও রেশন রোষের প্রভাব পড়েছে লোকসভা ভোটে। নির্বাচনে শাসকদলের ভরাডুবির অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে এসেছে এই রেশন ক্ষোভ। শুক্রবার শহর পুরুলিয়ার রবীন্দ্র ভবনে ওই সঙ্ঘের বৈঠকে জেলাশাসক বলেন, ‘রেশন দোকান নিয়মিত খোলা হচ্ছে কি না, তা দেখবে স্বনির্ভর দল। ডিলাররা বরাদ্দকৃত চাল কেটে নিলে, তাও রুখবেন তাঁরা। গণবণ্টনে কোনও বেনিয়ম চোখে পড়লে, তাঁরা সমস্ত তথ্য জানাবেন খাদ্য সরবরাহ দপ্তর এবং প্রশাসনকে।’
গত ১০ জুন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে স্বনির্ভর দলগুলিকে আরও গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপরেই রেশন রোষ রুখতে স্বনির্ভর দলকেই বনমহলের এই জেলায় বড় দায়িত্বে আনল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। এদিন স্বনির্ভর দলকে ‘প্রশাসনের প্রতিনিধি’ বলে ঘোষণা করেছেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। শুক্রবারের বৈঠকে ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সংঘ ছিল। এই জেলায় প্রায় ৩২০০০ স্বনির্ভর দল রয়েছে। তাঁরা খুব সহজেই রেশন দোকানগুলিতে নজরদারি চালাতে পারবে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসনই। বৈঠকে উপস্থিত পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘স্বনির্ভর দলের সমাজ সচেতনতা নিয়ে কোনও প্রশ্নই উঠতে পারে না। তাই আমরা গণবণ্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থায় নজরদারির দায়িত্ব তাঁদের দিয়েছি। আমাদের আশা, জঙ্গলমহলের মানুষ এবার থেকে রেশন পরিষেবা পাবেন যথাযথভাবেই৷ বেনিয়ম অনেকটাই রুখে দেওয়া যাবে।’
খাদ্য সরবরাহ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার অর্ধেক দিন ও সোমবার গোটা দিন ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন রেশন দোকান খোলা থাকার কথা। কিন্তু পুরুলিয়া জেলার অধিকাংশ রেশন দোকানই তিন দিনের বেশি খোলা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ। এবার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উপর দায়িত্ব দেওয়ায় এই অনিয়মের অবসান ঘটবে বলে আশা সকলের৷
ছবি: সুনীতা সিং৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.