সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বেআইনিভাবে বালি পাচার, ওভারলোডিং নিয়ে লাগাতার অভিযোগ উঠছিল। টাস্ক ফোর্স গড়ে অভিযানের কথা আগেই জানিয়েছিলেন জেলাশাসক। ড্রোন নজরদারিরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সবের অপেক্ষা না করে গলসি-১ ব্লকের দামোদরে বিভিন্ন এলাকায় আচমকা হানা দিলেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী। অভিযোগে যা শুনেছিলেন সরেজমিনে গিয়ে আরও মারাত্মক কারবার ধরলেন তিনি।
শুক্রবার রাতভর গলসি-১ ও ২ ব্লকের শিল্ল্যাঘাট, গোহগ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রচুর ওভারলোডিং ট্রাক আটক করা হয়েছে। দামোদরের বুকে রাস্তা দিয়ে লরি নামিয়ে বালি তোরা দৃশ্যও ধরেছেন জেলাশাসক। আবার গাড়ির নম্বর প্লেট বদল করেও বালি পাচার হচ্ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। এদিনের অভিযানে নদীর মাঝে নেমে বালি তোলায় ৭৪টি লরিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ওভারলোডিংয়ের জন্য দেড়শো লরিকে আটক করা হয়েছে। জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, বেআইনি বালির কারবার বন্ধে ধারাবাহিক অভিযান চালানো হবে। এদিনের অভিযানে নজরে আসে, অনেক লরিতে নম্বর প্লেট নেই, কোনওটিকে নম্বর প্লেটে পোড়া মোবিলের কালি লেপে দেওয়া হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি দিতে ওভারলোডিং করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) শশীকুমার চৌধুরি জানিয়েছেন, ওই লরিগুলিকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বেআইনি বালি খাদান তৈরি করা ও তার দখলদারিকে কেন্দ্র করে শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদ প্রকাশ্যে এসেছিল। সংঘর্ষ, বোমাবাজির মত ঘটনা ঘটে। আবার জেলা প্রশাসনের কাছেও বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগও আসে বালি পাচারের বিষয়ে। একটি বালিঘাটের চালানে বেআইনি বালি খাদানের বালি পাচার হয় বলেও অভিযোগ আসে। শুধু গলসি নয়, রায়না, খণ্ডঘোষ, জামালপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওভারলোডিং ও বালি পাচারের অভিযোগ জমা পড়ে জেলাশাসকের কাছে। বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষরাও নালিশ জানান জেলাশাসকের কাছে। এরপরই পুলিশ, প্রশাসন, পরিবহণ দপ্তর, ভূমি দপ্তরকে নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা জানান জেলাশাসক। শুক্রবার গলসি-১ বিডিও কার্যালয়ে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা নিয়ে বৈঠক করেন জেলাশাসক। সেখান থেকে ফেরার পথে রাতে পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে গলসির দুইটি ব্লকের দামোদরের বালিঘাটগুলিতে হানা দেন জেলাশাসক।
ওই এলাকার বহু বালিঘাট বাঁকুড়া জেলার অধীনে রয়েছে। কিন্তু বালি তুলে তা পূর্ব বর্ধমান জেলার রাস্তা ব্যবহার করে নিয়ে যাওয়া হয়। ওভারলোডিংয়ের ফলে জেলার বহু রাস্তা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রাতের অভিযানে আধিকারিকদের নজরে আসে নদীর মাঝে নেমে বালি তুলছে অধিকাংশ লরি। যা বেআইনি বলে জানাচ্ছেন আধিকারিকরা। অভিযানে এইরকম ৭৪টি লরিকে চিহ্নিত করেছেন আধিকারিকরা। সেগুলির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.