নন্দন দত্ত, সিউড়ি: জেলাশাসক যখন শিক্ষক, তখন তিনি শিশুও। শনিবার সিউড়ির কাছে নগরী গ্রামের উদয়ন পাঠশালায় চোখে পড়ল সেই শিশুকে। এদিন বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তাঁর মনে পড়ছিল ছোটবেলার স্কুলের দিনগুলোর কথা। লরেটো স্কুলের পড়ুয়া ছিলেন তিনি। বলছিলেন, ”শিশুদের দেখে আমার নিজের স্কুলের দিনগুলোর কথা মনে পড়ছিল।”
শনিবার জেলা জুড়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক নানা স্তরে একযোগে স্কুল পরিদর্শনের পরিকল্পনা নেয় জেলা প্রশাসন। যেখানে জেলাশাসক থেকে অতিরিক্ত জেলাশাসক, জেলা আধিকারিকরা একযোগে ৬০ টি স্কুল পরিদর্শন করেন। প্রাথমিক উদ্দেশ্য শুধু স্কুলের পরিকাঠামো বা মিড-ডে মিলের মান দেখা নয়, শিক্ষার অধিকার কতটা পাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা, তা দেখার। এর পাশাপাশি এদিনের মূল লক্ষ্য ছিল আদিবাসী স্কুলগুলি পরিদর্শন।
নগরী গ্রামের আমগাছি এলাকায় শিশুদের পাঠশালা উদয়ন। ৭২ জন ছাত্রছাত্রীর প্রায় সকলেই যথাসময়ে উপস্থিত। কারণ, স্কুল পরিদর্শনে আসার কথা স্বয়ং জেলাশাসকের। শুধু স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবদাস সাহা এলেন ১০ মিনিটে। তাঁর এই দেরির জন্য অকপটে ক্ষমা চেয়েও সিউড়ি থেকে খারাপ রাস্তার অজুহাত দিলেন। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা অবশ্য তাতে বিশেষ রাগ করেননি। তিনি বললেন, ”স্কুলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ার মান ভালই।” তৃতীয় শ্রেণিতে ঢুকে বই খুলে এক ছাত্রকে বাংলা বই থেকে তিনি পড়তে বলেন। তাঁর পাঠ শুনে জেলাশাসক খুশি। কাউকে কষতে দিলেন অঙ্ক।সকলেই প্রায় সময়মতো তা করে দিল। খুশি জেলাশাসক জানালেন, এখানে অঙ্ক ও বাংলার যে প্রাথমিক ভিত্তি হওয়া দরকার, তা যথাযথই আছে। কিন্তু বেশিরভাগই আদিবাসী ছাত্রছাত্রী হওয়ায় ভাষাগত কিছু অসুবিধা থেকে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক দেবদাস সাহা বলেন, ”আমরা জেলাশাসককে একজন অলচিকি শিক্ষকের কথা বললাম। উনি নিজেও এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন।” জেলাশাসক এদিন ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, সকলেই স্কুলের তরফে সরকারের দেওয়া পোশাক, জুতো, ব্যাগ – সবই পেয়েছে। কিন্তু এদিন দু-একজন ছাড়া কেউ তা পরে আসেনি। সর্বশিক্ষা দপ্তরের আধিকারিক বাপ্পা গোস্বামী জানান, সোমবার আদিবাসী স্কুল ও সেই ভাষার শিক্ষকের সংখ্যা নিয়ে বৈঠক হবে। তাঁদের কাছে ৪৪ জন আদিবাসী শিক্ষকের সন্ধান আছে। অলচিকিতে পঠনপাঠনে ছ’টি স্কুলের তালিকা পেলেও তাঁদের হিসেবে সেই সংখ্যা ৬০ হতে পারে। তবে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ওপর জেলাশাসক জোর দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই আধিকারিক।
ছবি: শান্তনু দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.