সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বুথের পরিকাঠামো সরেজমিনে পরিদর্শন-সহ অযোধ্যা পাহাড়ের বাসিন্দাদের নির্ভয়ে বুথমুখী করে ভোট দানে উৎসাহিত করতে প্রচারে নামলেন স্বয়ং জেলাশাসক, পুলিশ সুপার৷ অভয় দিলেন বাসিন্দাদের৷ সেইসঙ্গে পাহাড়ের বাসিন্দাদের জলকষ্ট হচ্ছে কি না, তারও খোঁজ নিলেন জেলাশাসক। সোমবার পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার, পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া-সহ ঝালদা মহকুমা প্রশাসন পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা পাহাড়ে গিয়ে একাধিক বুথ পরিদর্শন করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। অযোধ্যা পাহাড়ের সমস্ত বুথে ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের ব্যবহার বোঝাতে বিশেষ ব্যবস্থার নির্দেশ ছিল প্রশাসন তথা নির্বাচন কমিশনের। অযোধ্যা পাহাড়ে এদিন হয়ে গেল ভোটের মহড়া৷
একদা অযোধ্যা পাহাড় ছিল মাওবাদী উপদ্রুত এলাকা। আতঙ্কে ঘরের বাইরে পা রাখতে ভয় পেতেন মানুষজন৷ এখন ঝাঁ-চকচকে রাস্তা, পর্যটন-সহ পরিকাঠামোগত উন্নয়নে পাহাড়ের ছবিটা বদলে গিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই এই পাহাড়ে টুরগা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে সরব হয়ে উঠেছেন এই এলাকার মানুষজন। তাঁদের দাবি, জঙ্গল কেটে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করতে দেবেন না। তাতেই পাহাড়ের আবহ থমথমে হয়ে গিয়েছে৷ সামনে ভোট৷ পাহাড় লাগোয়া বাসিন্দাদের মগজধোলাইয়ের চেষ্টাও চলছে বলে অভিযোগ। তাই পাহাড়ের আটটি বুথ সরেজমিনে পরিদর্শন করতে সোমবার সেখানে যান জেলাশাসক, পুলিশ সুপার৷
শেষ বসন্তেই যেভাবে পুরুলিয়ার তাপমাত্রা বাড়ছে তাতে যাতে এখানকার মানুষজনের জলকষ্ট না হয় সে বিষয়ে নজর দিতেও একাধিক গ্রামে ঘুরে বেড়ান জেলাশাসক। তাঁর কথায়, ‘পাহাড়ের বুথগুলি আমরা পরিদর্শন করলাম। যাতে ভোটার-সহ ভোট ডিউটিতে আসা কর্মীদের কোন সমস্যা যেন না হয়। তাছাড়া পাহাড়ের পানীয় জলের কোন সমস্যা রয়েছে কিনা, তার খোঁজ নিলাম।’ কিন্তু এদিন ডিএম–এসপির কাছে পাহাড়ের বাসিন্দারা জানান, পাহাড়ে এখনও জলের ট্যাঙ্কার পৌঁছয়নি। এই অভিযোগ শুনে বাঘমুন্ডির বিডিও উৎপল দাস মুহুরিকে দ্রুত এখানে ট্যাঙ্কার পাঠানোর নির্দেশ দেন জেলাশাসক। এদিন একেবারে পাহাড়ের মাথায় শিমূলবেড়া গ্রামের এদেলবেড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকা বুথ দিয়ে পরিদর্শন শুরু করেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। এই বুথেই ভোট দিতে যান একদা মাওউপদ্রুত উসুলডুংরী গ্রামের মানুষজন। ওই বুথে ডিএম–এসপি দু’জনেই ভিভিপ্যাট বিষয়ে সাধারণ মানুষজনকে বুঝিয়ে দেন। আরেক গ্রামে গিয়েও শোনা যায় পানীয় জলের সমস্যার কথা৷ কালিঝরনা গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীমণি মান্ডি, ছাতনি গ্রামের গুঞ্জলী হেমব্রমরা জানান, পানীয় জলের বড় সমস্যা রয়েছে। বৈশাখ মাস পড়লে জলকষ্ট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন৷
ছাতনি গ্রামে গিয়ে স্থানীয় কচিকাঁচাদের চকলেট বিলি করেন ডিএম–এসপি। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, “পাহাড়ের বুথগুলি পরিদর্শনে এসেছিলাম। ইভিএম–ভিভিপ্যাট নিয়ে প্রচারের মধ্যে দিয়ে পাহাড়বাসীকে বুথমুখী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি৷” এই পাহাড়ে মোট আটটি বুথ সাহারজুড়ি, তেলিয়াভাসা, বাঁধডি,ছাতনি, শিমূলবেড়া, রাঙা ও অযোধ্যা হিলটপের দুটি। সবকটি বুথই পরিদর্শন করেন জেলাশাসক, পুলিশ সুপার৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.