পলাশ পাত্র, তেহট্ট: বারাসতের পর এবার কৃষ্ণনগর। সরস্বতী পুজোতে ডিজে বাজিয়ে হিন্দি গানের সঙ্গে পড়ুয়াদের চটুল নাচে কলেজের ‘অপসংস্কৃতি’কে এবার কাঠগড়ায় তুলে দিলেন কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের পড়ুয়ারা।
সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানে এই কলেজের নিউ হস্টেলের ভিতর মেয়েদের নিয়ে আসা হয়। তারপর হিন্দি গানের সঙ্গে চলে অশ্লীল চটুল নাচ। যাকে কেন্দ্র করে নিন্দার ঝড় উঠেছে শিক্ষা মহলে। ১৮৪৬ সালে স্থাপিত হওয়া রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন কলেজ কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ। সেই কলেজের বয়েজ নিউ হস্টেল কার্যত উঁচু পাঁচিল আর লোহার গেটে মোড়া। যেখানে মেয়েদের প্রবেশের অনুমতি নেই। সোমবার রাতে সরস্বতী পুজো উপলক্ষে নাচ-গানের অনুষ্ঠান চলছিল সেখানে। তা নিয়ে অবশ্য কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু সেখানে অল্প বয়সি কিছু মেয়েকে নিয়ে এসে উদ্যাম নাচকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
গভর্নমেন্ট কলেজে পড়া প্রায় পঁচিশজন ছাত্র এই হস্টেলে থাকে। প্রতি বছর এখানে সরস্বতী পুজো হয়। এ বছরও বাগদেবীর আরাধনায় মগ্ন ছিল গোটা হস্টেল। সোমবার সন্ধে নামতেই নাচ গান শুরু হয়ে যায়। রাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অল্প বয়সি নর্তকীরা হস্টেলের মঞ্চে তাঁদের নৃত্য পরিবেশন করতে শুরু করেন। উত্তেজনায় ভরপুর সেই হিন্দি গানের সঙ্গে আবাসিকরাও নাচতে থাকেন। একের পর এক হিন্দি গানের সঙ্গে নর্তকীদের হিল্লোল তোলা নাচ। জমে ওঠে আসর। সেই নাচের ভিডিও মোবাইল মারফৎ ছড়িয়েও পড়ে। আর তারপর থেকেই শুরু বিতর্ক।
সার্ধ শতবর্ষ অতিক্রম করা এই কলেজে একসময় পড়াশোনা করেছেন কবি সাহিত্যিক দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, প্রমথ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মনমোহন ঘোষ, বিজ্ঞানী জগদানন্দ রায়ের মতো একাধিক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি। এই বিখ্যাত পূর্বসূরীদের প্রণাম জানিয়ে ছাত্রদের পথ চলা শুরু হয়। কিন্তু সেখানেই সরস্বতী পুজোর মতো বিশেষ দিন অপসংস্কৃতির আসর বসে। নিউ হস্টেলের ছাত্ররা জানিয়েছেন, এই অনুষ্ঠানের জন্য কলেজের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। হিন্দি গানের সঙ্গে হওয়া এই নাচে অসুবিধা কেন? এমন প্রশ্নও তোলা হয়। কলেজের টিচার ইনচার্জ শোভন নিয়োগী অবশ্য বলেন, “আমরা কোনও অনুষ্ঠানের অনুমতি দিইনি। বিষয়টি আমার জানা নেই।” আগে কখনও এ ধরনের অপসংস্কৃতি হস্টেলে দেখা যায়নি বলে অনেকেই জানিয়েছেন। ঘটনা প্রসঙ্গে কলেজ ইউনিটের সভাপতি সুজয় হালদার বলেন, “ঘটনাটা শুনেছি। আমরা এসব অপসংস্কৃতি একদম বরদাস্ত করি না। আমাদের সঙ্গে ওদের কোনও যোগাযোগ নেই।” কলেজের অ্যালুমনি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক খগেন দত্তের কথায়, কলেজের বয়েজ হস্টেলে মেয়ে ঢোকা নিষেধ। আর সরস্বতী পুজোয় এমন চটুল নাচ-গান কোনওভাবে মেনে নেওয়া যায় না। কলেজের গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্ট জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বিষয়টি খোঁজ দেখছেন বলে জানান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.