রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে গেরুয়া শিবিরের কাছে বড় কাঁটা ঘরোয়া কোন্দল। একাধিক শিবিরে বিভক্ত বঙ্গ বিজেপি। আর সেই আববেই দুর্গাপুরে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকেও শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ফাটলের ছবি বিভিন্ন সময়ে সামনে চলে এল। সুকান্ত মজুমদার-দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারী, এই পৃথক তিন শিবিরের মধ্যে ঐক্য দেখানোর চেষ্টা হলেও সেই প্রয়াস যে ভবিষ্যতে সম্ভব নয় তা সামনে চলে এসেছে। এদিন মিউনিসিপ্যাল মোড় থেকে মিছিল করে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব সিটি সেন্টারের অভিজাত হোটেল পর্যন্ত আসেন। মিছিলে সুকান্ত-দিলীপ-শুভেন্দুকে পাশাপাশি হাঁটতে দেখা যায়। সংবাদমাধ্যম দিলীপকে প্রশ্ন করলে দিলীপবাবু পাশের দিকে থাকা শুভেন্দু অধিকারীর দিকে দেখিয়ে দেন। আবার হোটেলে বৈঠক শেষে দিলীপ ঘোষকে ঘিরে ছিল পুরোনো নেতাদের ভিড়। শুভেন্দুকে ঘিরে থাকতে দেখা যায় দলের পদাধিকারী কয়েকজন বিধায়ককে।
কর্মসমিতির বৈঠকের প্রথম দিনে দলের রাজ্য পদাধিকারী ও মোর্চা সভাপতি এবং সাংসদরা ছিলেন। তবে পদাধিকারী বৈঠকে দেখা যায়নি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে। আজ রাজ্য কমিটির বর্ধিত বৈঠক হবে। সূত্রের খবর, বর্ধিত বৈঠকে একাধিক পুরোনো নেতারা ডাক পাননি। অনেকে আবার ডাক পেলেও নাও আসতে পারেন। অভিযোগ, কয়েকজনকে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকের খবর দিয়ে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। ফলে রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে অনেক পুরোনো নেতারা আমন্ত্রণ না পেয়ে ক্ষুব্ধ। দলের একাংশ এসব নিয়ে অভিযোগের আঙুল তুলেছে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সংগঠন অমিতাভ চক্রবর্তী শিবিরের দিকে। তবে দলের কোন্দল মেটাতে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল থেকে মঙ্গল পান্ডেরা যতই ঐক্য দেখানোর চেষ্টা করুন না কেন, তা যে বাস্তবে হওয়ার নয় মত গেরুয়া শিবিরের বড় অংশেরই। শুক্রবার পদাধিকারী বৈঠকে পাশাপাশি ছিলেন সুকান্ত-দিলীপ-শুভেন্দু।
কিন্তু দলের একাংশের কথায়, দিলীপ-শুভেন্দুকে পাশাপাশি বসিয়ে ঐক্যের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হলেও তা বাস্তবে সম্ভব নয়। দুজনের মধ্যে ফাটল একচুল কমেনি। আবার কেন্দ্রীয় নেতারা সুকান্ত-শুভেন্দুর মধ্যে মিল করানোর চেষ্টা করলেও সেটা যে সম্ভব হয়নি তা স্পষ্ট হয়েছে কয়েকদিন আগে দিল্লিতে হয়ে যাওয়া বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে। বাংলা থেকে সুকান্ত মজুমদার, ভারতী ঘোষ, রাজু বিস্তা-রা বলার সুযোগ পেলেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বক্তব্য রাখার সুযোগ না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণের আগেই বেরিয়ে যান। দলের হোয়াটস আপ গ্রুপে সুকান্তর ভাষণের প্রশংসা করেছিলেন ভারতী ঘোষ-সহ আরও অনেকে।
এদিকে, দুর্গাপুরে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক যেখানে হচ্ছে সিটি সেন্টারের এক বিলাসবহুল হোটেল, যার মালিকানা রয়েছে গেরুয়া শিবির ঘনিষ্ঠ এক কয়লা মাফিয়ার। কেন ওই হোটেলে দলের রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকের আয়োজন করা হল তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের মধ্যেই। শুরু হয়েছে বিতর্কও। আর দুদিনের এই বৈঠকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। পাঁচটির বেশি হোটেল ভাড়া করা হয়েছে প্রতিনিধি, নিরাপত্তা রক্ষী ও গাড়ির চালকদের থাকার জন্য। পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখেই মূলত আলোচনা হবে আজ কর্ম সমিতির বর্ধিত বৈঠকে। পাশাপাশি চব্বিশের লোকসভা ভোটের বিষয়টিও সামনে রাখা হবে। গতকাল পদাধিকারী বৈঠকে আন্দোলন ও রণকৌশলের একটা রূপরেখা ঠিক হয়েছে। নিচুতলায় দলের সংগঠনের যে ভগ্নপ্রায় অবস্থা তা ঠিক করা যে অত্যন্ত কঠিন এমনটাই মনে করছে রাজ্য নেতৃত্ব। সেই পরিস্থিতি কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় তা নিয়ে আজকের বৈঠকে পথ খোঁজার চেষ্টা হবে।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.