সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শ্রীনু নায়ডু খুনে চাঞ্চল্যকর মোড়। শ্রীনু খুনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা খড়গপুরের বিধায়ক দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুললেন শ্রীনুর স্ত্রী পূজা নায়ডু। খড়গপুর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর পূজার অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনের আগে শ্রীনু সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, শ্রীনুকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন দিলীপবাবু। শুধু তাই নয়, রেলশহরে শ্রীনুর নামগন্ধ মিটিয়ে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। ঘটনার চারদিনের মাথায় শনিবার নীরবতা ভেঙে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন পূজা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে খড়গপুরে প্রচারসভায় গণ্ডগোলের জেরে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে শ্রীনুর ঝামেলা হয়। তখনই শ্রীনুকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন দিলীপ ঘোষ। এমনকী, খড়গপুর থেকে শ্রীনুর নামগন্ধ মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলেন তিনি।’ পূজা আরও জানিয়েছেন, শ্রীনুর অন্ত্যেষ্টির কাজকর্ম মিটে গেলেই দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের কথা ভাবনা-চিন্তা করবেন তিনি। আপাতত ভারতী ঘোষ ও পুলিশের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দিলীপ ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, শ্রীনুর সঙ্গে কোনওদিনই এমন কথা হয়নি তাঁর। প্রমাণস্বরূপ ভিডিও ফুটেজ আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি পূজার অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, ‘পূজাকে দিয়ে এমন অভিযোগ করাতে পুলিশের চারদিন লেগে গেল। প্রতিহংসার রাজনীতি চলছে গোটা রাজ্যে। পুলিশের মদতেই আসল দোষীরা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’ প্রসঙ্গত, শ্রীনু নায়ডু খুনের ঘটনায় এখনও অবধি পুলিশের জালে ধরা পড়েছে মোট আটজন৷ শনিবার ভোরে জন ফ্রান্সিসকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ এখনও চারজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানা গিয়েছে৷ তাদের সন্ধানেও তল্লাশি শুরু হয়েছে৷ ভিনরাজ্যেও পাড়ি দিয়েছে পুলিশের টিম৷ বাকিদের তল্লাশির পাশাপাশি এই খুনের পিছনে জড়িত সেই বড় মাথার বিরুদ্ধেও তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ের কাজ করছে পুলিশ৷ বড় মাথার গতিবিধিও প্রতিদিন নজরে রাখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে৷ সেই তদন্ত ক্রমেই এগোচ্ছে মালঞ্চের দিকেই৷ তার অন্যতম কারণ খুনের ধরন৷ যেভাবে দিনের বেলায় ফিল্মি কায়দায় শ্রীনুকে খুন করা হয়েছে, সেরকম নজির আগেও দেখেছে রেল শহর খড়গপুর৷ কী সেই ছক? পুলিশের সূত্র বলছে, দিনের বেলায় সশস্ত্র হামলা চালানো৷ টার্গেটকে প্রতিরোধ বা পালানোর কোনও সুযোগ না দেওয়া৷ কোনওভাবে যেন টার্গেট বেঁচে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে নিখুঁত নিশানায় গুলি চালানো৷ সেই মাথার খোঁজ করতে গিয়ে এখন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ পুরনো খুনের দস্তাবেজ ঘাঁটতে শুরু করেছে৷ তাতে দেখা গিয়েছে, আগের কয়েকটি খুনের স্টাইল প্রায় হুবহু মিলে যাচ্ছে শ্রীনু খুনের সঙ্গে৷
পুলিশ জানিয়েছে, ৮ জানুয়ারি খড়গপুরে এক ভাড়া বাড়িতে শ্রীনু নায়ডুকে হত্যার ছক চূড়ান্ত করেছিল খুনিরা৷ সেই বৈঠকে ছিল ঝাড়খণ্ডের চার সুপারি কিলারও৷ ছিল শ্রীনু ঘনিষ্ঠ শংকর রাও ও ঘরের ভাড়াটিয়া ফ্রান্সিস৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুদের কারবারি পরিচয় দিয়ে সাত-আটমাস আগে রেল শহর খড়গপুরে ঘর ভাড়া নেয় ফ্রান্সিস৷ সুদের কারবার থাকলেও ফ্রান্সিসের আসল কাজ ছিল ‘অপারেশন শ্রীনু’৷ রাজ্যের বাইরের এক বড় মাথার নির্দেশেই শ্রীনুকে খতম করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ৷ সেই জন্যই তার রেল শহরে পা রাখা বলে পুলিশি জেরায় স্বীকার করে নিয়েছে ফ্রান্সিস৷ পুলিশি জেরায় শ্রীনুর এই তথ্য হাতে আসার পরই নড়েচড়ে বসেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশের শীর্ষকর্তারা৷ অন্যদিকে আদালতের নির্দেশে পুলিশ হেফাজতে থাকা শ্রীনুর অন্যতম সহযোগী শংকর রাওকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই খুনের প্রথম প্লট তৈরি হয়েছিল দক্ষিণ ভারতের ভাইজাগে৷ মোট ৮ লক্ষ টাকা সুপারি দিয়েই শ্রীনু খুনের বরাত দেওয়া হয়। সেই বৈঠকে ফ্রান্সিস, ছাড়াও ছিল এই খুনের মূল চক্রান্তকারী সেই বড় মাথাও৷ এমনটাই জানা গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশের তরফে৷
আরও পড়ুন-
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.