কুণাল ঘোষ ও কিংশুক প্রামাণিক: অক্ষয় তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নই সেই বহু প্রতীক্ষিত সময়। দিঘায় প্রভু জগন্নাথদেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠা ও সুবিশাল জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন। আর তার পরই জনগণের উদ্দেশে খুলে দেওয়া হবে সেই মন্দির। বস্তুত পরিচয়েও বদলে যাবে বাংলার সমুদ্রসৈকত শহর দিঘা। প্রকৃত অর্থেই হয়ে উঠবে জগন্নাথধাম।
মঙ্গলবার মহাযজ্ঞের শেষ পর্বে পুর্ণাহুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ক’দিন ধরে হয়েছে সম্পূর্ণ শাস্ত্রীয় রীতি মেনে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান। সেখানে যেমন পুরীর দৈতাপতি ছিলেন, তেমনই ইসকনের পূজারি-কর্তারা বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পুরোধার্য। সমস্তটাই তদারকি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনই তিনি দিঘায় উপস্থিত পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, আনুষ্ঠানিক দ্বারোদঘাটনের পরই সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে মন্দির। পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট বলেন, পর্যটনের দিক থেকে আগামীদিনে দিঘা আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত হবে। এই মন্দির হবে দেশের গর্ব। মন্দিরের স্থাপত্য বা নির্মাণের আজিক-কৌশল দেখে আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেই দেন, এত সুন্দর স্থাপত্য ও কাজ এত সুন্দর-নিখুঁত হয়েছে যে বলার নয়। সব সম্প্রদায়ের মানুষ এসেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেন, যতটা সম্ভব পেরেছি, করেছি। আসলে, বছর সাতেক আগে তিনি এই সমুদ্রসৈকতেই হাঁটতে হাঁটতে ভেবেছিলেন জগন্নাথ মন্দির স্থাপনের ভাবনা। তাঁর মনে হয়েছিল, পুরীর মতো অনবদ্য সৈকত-ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতি সবটাই দিঘায় রয়েছে। শুধুমাত্র প্রভু জগন্নাথের মন্দিরটাই নেই। এবার সেই ভাবনারই বাস্তবায়ন। সমুদ্র-পর্যটন কেন্দ্রের আধ্যাত্মিকতার মিশেলে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রের মর্যাদা এবার পেতে চলেছে বাংলার দিঘা। ২৫ একর জমির উপর সামগ্রিকভাবে কাজটা সহজ ছিল না। খরচ হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী প্রতীক্ষা করছেন মন্দির দ্বারোদঘাটন। বুধবার বেলা আড়াইটে থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে। ৩টের সময় দ্বারোদঘাটন। ৫ মিনিটের জন্য মন্দির খুলে দেওয়া হবে। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উদ্বোধনের প্রাক্কালে পূর্ণাহুতির পরে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “প্রত্যেকেই আমাদের অতিথি। ধর্ম কখনও মুখে প্রচার করে হয় না। ধর্মে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার জিনিস। আস্থা-বিশ্বাস-ভালোবাসাই ধর্ম। মা-মাটি-মানুষ ভালো থাকলে আমি ভালো থাকব। তাই সকলের হয়ে প্রার্থনা করছি।” সোমবার অধ্যাত্মবাদ-সম্প্রীতির মেলবন্ধনের কথা বলেছিলেন। এদিন মমতাকে প্রশ্ন করা হয়, পুরীর মন্দিরের সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই পৃথিবী সবার। অন্তর থেকে গোটা ব্যাপার দেখতে হবে। বস্তুত দিঘায় এবার সমুদ্র ও মন্দিরের। মিশেলে যে পর্যটক সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য। ভিন রাজ্য থেকে এদিনই বহু মানুষ আসতে শুরু করেন। সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি মুখ্যমন্ত্রীর। যাঁরা মন্দিরে প্রবেশ করবেন তাঁদের দেওয়া হবে গামছা। আনা হয়েছে মোট ২২ হাজার গামছা। বসার জন্য চেয়ার ও কার্পেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থাও রয়েছে। বস্তুত বাংলাজুড়েই প্রভু জগন্নাথের প্রাণপ্রতিষ্ঠা ও মন্দির উদ্বোধন দেখানোর আয়োজন সম্পূর্ণ। দিঘায় ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হয়েছে। যাঁরা মন্দির দর্শনে যাবেন, তাঁরা ওল্ড দিঘা থেকে ১১৬বি জাতীয় সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার হেঁটে মন্দিরে পৌঁছতে পারবেন। নিউ দিঘা বাস ডিপো থেকে আসবেন তাঁরাও, ১১৬বি জাতীয় সড়ক ধরে শনিমন্দিরের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে। পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তার সম্পূর্ণ তদারকি করছে। মুখ্যমন্ত্রীও নজর রেখেছেন। সমুদ্রসৈকতের দিঘাই যে আজ থেকেই বদলে যাবে আরও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.