সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: এবার রঙের উৎসব দোলকে ভেষজ আবিরে রাঙিয়ে তুলতে চলেছেন উলুবেড়িয়ার বিশেষভাবে সক্ষম একঝাঁক কিশোর-কিশোরী। তাঁদের হাতেই পলাশ, গোলাপ, গাঁদা ও অপরাজিতা ফুল থেকে তৈরি হচ্ছে সুগন্ধি ভেষজ আবির। উলুবেড়িয়ার আশাভবন সেন্টারে এখন তাই চূড়ান্ত ব্যস্ততা। বিশেষভাবে সক্ষমদের নিয়ে কাজ করে এই সংস্থা। এখানকার আবাসিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে প্যাকেটজাত করছেন বিভিন্ন ধরনের ভেষজ আবির। এই বিশেষভাবে সক্ষম কিশোর-কিশোরীদের মনের রং এখন শুধু ফাগুনের রং হয়ে আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায়।
পূর্ণিমা ঢালি, সুপ্রিয়া দলুই, ফারুক আলি, মণ্টু মণ্ডলদের কেউ ফুল থেকে পাপড়ি আলাদা করতে ব্যস্ত, আবার কেউ ব্যস্ত রং নিষ্কাশনে। আবির তৈরির পর কেউ তা রোদে মিলে শুকিয়ে নিচ্ছে, কেউ আবার তাতে সুগন্ধি মিশিয়ে প্যাকেট-বন্দি করছে। সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা তা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন তপন সাউ। সম্পূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এই আবির তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের তাজা ফুল কিনে আনা হয় বলে জানালেন আশা ভবনের হোম সুপার অরুণিমা জাসু। তিনি বলেন, বাসি বা পচা ফুল দিয়ে ভেষজ আবির তৈরি হয় না। যার ফলে উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি হয়। তেমনই এই আবির ব্যবহারে ত্বকের উপরে কোনও রকম প্রতিক্রিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে না। তপন সাউ জানালেন, ৭৫০ গ্রাম ট্যালকম পাউডার ও ২৫০ গ্রাম অ্যারারুটের সঙ্গে ৫০০ গ্রাম ফুলের পাপড়ির গুঁড়ো মিশিয়ে এই আবির তৈরি করা হয়। পরে তাতে স্বাস্থ্য সহায়ক সুগন্ধি মিশিয়ে প্যাকেট-বন্দি করা হয়। তিনি জানান, গাঁদা ফুলের আবিরের ১০০ গ্রাম প্যাকেটের দাম ৪০ টাকা। ৫০০ গ্রামের দাম ১৭৫ টাকা এবং ১ কেজি প্যাকেটের দাম ৩০০ টাকা। পলাশ ও অপরাজিতা ফুলের আবিরের ১০০ গ্রাম প্যাকেটের দাম ৫০ টাকা। ৫০০ গ্রামের দাম ২২৫ টাকা এবং ১ কেজি প্যাকেটের দাম ৪০০ টাকা। গোলাপ ফুলের আবিরের ১০০ গ্রাম প্যাকেটের দাম ৬০ টাকা। ৫০০ গ্রামের দাম ২৭৫ টাকা এবং ১ কেজি ওজনের প্যাকেটের দাম ৫০০ টাকা। তিনি বলেন ফুল ছাড়াও লটকন ফল থেকেও ভেষজ আবির তৈরি করা হয়।
[ গাইঘাটায় বড়মার শেষযাত্রা, মৌন মিছিলে পা মেলালেন মতুয়া ভক্তেরা ]
আশা ভবন সেন্টারের সহযোগিতায় উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের উদ্যোগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৩০ দিনের ভেষজ আবির তৈরির প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই প্রশিক্ষণ কর্মশালা থেকেই তাঁরা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। উৎপাদিত ভেষজ আবিরের বিপণনের বিষয়ে আশা ভবন সেন্টারের ডিরেক্টর জনমেরি বারুই বলেন বিভিন্ন বিপণন সংস্থার মাধ্যমে তাঁরা এই আবির বাজারজাত করতে চান। এছাড়াও সরকারি উদ্যোগে যেসব জায়গায় বসন্ত উৎসব পালিত হয় সেইসব উৎসবের উদ্যোক্তারা যদি তাঁদের উৎপাদিত ভেষজ আবির সেই উৎসবে ব্যবহার করেন তাহলে বিশেষভাবে সক্ষম কিশোর-কিশোরীরা তাদের এই পরিশ্রমের সার্থকতা খুঁজে পাবে।
উল্লেখ্য আজ থেকে প্রায় ১৯-২০ বছর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দত্ত তাঁর দীর্ঘ গবেষণায় বিভিন্ন ধরনের ফুল থেকে রং নিষ্কাশন করে ভেষজ আবির উৎপাদন শুরু করেন। বাগনান থানার নবাসনে আনন্দ নিকেতন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে সিদ্ধার্থবাবুর হাত ধরেই ‘কুসুমিকা’ নামে সর্ব প্রথম ভেষজ আবির প্রকল্পের সূচনা হয়। এই আবিরে কোনওরকম রাসায়নিকের ব্যবহার থাকে না বলে এই আবির ত্বকের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরাপদ, জানিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক-অধ্যাপক। কিন্তু দুঃখের কথা ফুলের জোগানের অভাবে ওই প্রকল্পটি অঙ্কুরেই বিনাশ হয়। সেই সময় অভিযোগ ওঠে বাগনান-১ ও ২ ব্লক ফুল চাষে রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানে থাকা সত্ত্বেও সেখানকার ফুল চাষিরা এইরকম একটা অর্থকরী প্রকল্পের কথা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি। তাই তাঁদের অবিক্রিত ফুল তাঁরা গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে এলেও সেই ফুল কুসুমিকা প্রকল্পের কাজে আসেনি। কুসুমিকা প্রকল্প বন্ধ হওয়ার পর আমতার সম্প্রীতি মহিলা সংঘ ভবনে একটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী পুনরায় ‘পুষ্পা’ নামে ভেষজ আবির প্রকল্প শুরু করে। কিন্তু ফুলের জোগানের অভাবে সেই প্রকল্পটিও মুখ থুবড়ে পড়ে। যেহেতু এখন ভেষজ আবিরের চাহিদা তুঙ্গে তাই প্রয়োজন মতো ফুলের জোগান থাকলে আশা ভবন সেন্টারের এই প্রয়াস সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।
[ স্ট্যান্ডে সাইকেল রেখে বাইক নিয়ে চম্পট! বর্ধমানে গ্রেপ্তার সরকারি কর্মী ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.