জ্যোতি চক্রবর্তী, বসিরহাট: বিদায়বেলাতেও বসত মিলনের হাট। ইছামতীর জল মিলিয়ে দিত দুই বাংলাকে। সীমান্তের বাধা পেরিয়ে বিজয়ার মিষ্টিমুখ, শুভেচ্ছা বিনিময় চলত অনায়াসে। দুর্গা (Durga Puja) বিসর্জনে টাকির ইছামতী (Ichhamati) নদীতে এই-ই ছিল অতি পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু চলতি বছর সেই চেনা ছবিটা অধরা। কারণ, করোনাসুরের আবির্ভাব, যা ভাসানের জলেও বিসর্জন করা গেল না। কোভিড পরিস্থিতিতে পুলিশ, বিএসএফে, পৌরসভার নিষেধাজ্ঞায় টাকিতে সোমবার ইছামতীর বুকে ভাসান হলেও, দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল না। নদীর বুকে বিসর্জনের নৌকাও ছিল হাতে গোনা।
এদিন সকাল থেকে টাকির ইছামতী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। সকালেই সৈয়দপুর টাকি জমিদার বাড়ির দেবীবরণ ও সিঁদুরখেলা শেষে তিথি মেনে ইছামতীর বুকে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। রীতি মেনে টাকির ঘোষবাবুর ঘাটে জমিদার পরিবারের প্রতিমা বিসর্জন হয়। পাশাপাশি আরও কয়েকটি বনেদি বাড়ির ভাসানও হয় এই নদীতে। বিসর্জন উপলক্ষে ইছামতীর পাড়ে প্রশাসনের তরফে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিলি হয়। মাস্ক পরেই চলে সিঁদুরখেলা ও বিসর্জন। বিএসএফ ও বিজিবি ইছামতীর বুকে আলাদা নৌকোয় টহলদারি চালায়। নদীর ঘাটগুলোতেও ছিল জেলা প্রশাসনের কড়াকড়ি। টাকি পৌরসভার পক্ষ থেকে বিসর্জন উপলক্ষে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। সেই নির্দেশ মেনে হাতে গোনা কয়েকটি নৌকোয় পারিবারিক ও বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা বিসর্জন হয়।
টাকির ইছামতি নদীর ভাসান দেখার জন্য বছরভর অপেক্ষা করে থাকেন দুই বাংলার অসংখ্য মানুষ৷ ইছামতীর বুকে নৌকা থেকেই চলে দু’দেশের মানুষের শুভেচ্ছা বিনিময়। গোটা রাজ্য থেকে এই ভাসান দেখতে মানুষ ছুটে আসেন টাকিতে৷ ভাসানের দিন অসংখ্য দোকানপাট বসে নদীর পাড়ে। দুই বাংলা মিলন উৎসবের চেহারা নেয়। দেবীর বিদায়বেলাতেও তাই উৎসবমুখর হয়ে থাকে ইছামতীর পাড়।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে টাকির ভাসানের উৎসাহ অনেকটা কমেছে পুলিশ, বিএসএফের কড়াকড়ির কারণে৷ চলতি বছর তার সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার বিপদ। ফলে এবার ইছামতীর বুকে দুই বাংলার প্রতিমা বিসর্জনের মিলন উৎসব ফিকে হয়ে গিয়েছে। মহামারী পরিস্থিতিতে তাই জৌলুসহীন ইছামতীতে প্রতিমা বিসর্জন পর্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.