সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: তীব্র গরমে নাজেহাল রাজ্যবাসী। একই অবস্থা প্রাণীকূলেরও। তাই পুরুলিয়া মিনি জু-এর প্রাণীদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পরিবর্তন আনা হল খাদ্যতালিকায়। দুধ-রুটি, ডিম, ভুট্টা গুড়োর বদলে শসা, তরমুজ, গ্লুকোজের জল খাওয়ানো হচ্ছে ভল্লুক, চিতল হরিণদের। চলছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভল্লুকের জলকেলিও।
ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পাথুরে জেলা পুরুলিয়ায় প্রতিবছরই দাপট দেখায় গ্রীষ্ম। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য গ্রীষ্মকাল হলেও রুখা-শুখা এই জেলায় সেই চৈত্র মাস থেকে টানা তাপপ্রবাহ চলছে। গ্রীষ্মের এই দাপট থাকে আষাঢ়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত। মাঝে মধ্যেই কালবৈশাখী প্রখর তাপপ্রবাহ থেকে খানিকটা মুক্তি দিলেও ঝড়-বৃষ্টির দু-তিন দিন পর থেকেই আবার একই অবস্থা। এই গরমে হাসফাঁস অবস্থা পুরুলিয়ার চিড়িয়াখানার প্রাণীদেরও। তাই তাদের সুস্থ রাখতে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
শহর পুরুলিয়ার উপকন্ঠে পুরুলিয়া মিনি জু-তে রয়েছে ২২টা চিতল হরিণ, দুটি ভল্লুক, তিনটে হনুমান, দুটো বাঁদর, একটা ময়ূর, দুটো সজারু, একটি পেঁচা ও একটি অজগর। এই প্রাণীগুলির মধ্যে চিতল হরিণ ও ভল্লুকেরই খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন এনেছে বনদপ্তরের কংসাবতী উত্তর বনবিভাগের অধীনে থাকা এই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো নিয়মিত দুবেলা চিতল হরিণগুলোকে গ্লুকোজের জল খাওয়াচ্ছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। সেই সঙ্গে তাদের এনক্লোজার চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বস্তা দেওয়া হয়েছে ময়ূর, সজারু, পেঁচাদের আশ্রয়স্থলেও।
পুরুলিয়া মিনি জু-র দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ আধিকারিক নলিনীকান্ত মাহাতো বলেন, “পুরুলিয়ায় প্রতিবছর যা গরম পড়ে তাতে নাজেহাল অবস্থা হয় প্রাণীদের। তাই তাদেরকে সুস্থ রাখতে চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন আনতেই হয়। এবারও আমরা তাই করেছি।” প্রতিদিন চিতল হরিণদের নানারকম ডালের গুড়োর সঙ্গে গুড় দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে ভুট্টার গুড়োও। এখন ভুট্টার গুড়ো খানিকটা কমিয়ে ‘লু’ থেকে দূরে রাখতে গুড়ের পরিমাণ অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর সকাল ন’টা নাগাদ সবুজ সবজিতে বেশি করে শসা, তরমুজ রাখার পাশাপাশি ভেজা ছোলাও দেওয়া হচ্ছে। চিতল হরিণদের এনক্লোজারে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জলের পাত্রের সংখ্যাও। সেখানেই রাখা হয়েছে গ্লুকোজ।
জানা গিয়েছে, ব্রানি ও বিকাশ নামে দু’টি ভল্লুককে ডিম সেদ্ধ, দুধ, রুটির পরিবর্তে বেশি করে গ্লুকোজ ও তরমুজ খাওয়ানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বনদপ্তরের এক কর্মী বলেন, “ব্রানি-বিকাশ তো এই গরমে সেভাবে খাবারই মুখে তুলছে না। সকাল আটটার পর ঘরের ভেতর ঢুকলে আর রোদ না পড়া পর্যন্ত তারা আশ্রয়স্থল থেকে এনক্লোজারের দিকে পা বাড়াতেই চাইছে না। মাঝে মধ্যেই চলে যাচ্ছে চৌবাচ্চার দিকে। সেখানেই জলে নেমে কাটিয়ে দিচ্ছে দিনের অধিকাংশ সময়। ফলে হতাশ হচ্ছে চিড়িয়াখানায় আসা মানুষজন।” সব মিলিয়ে তীব্র দহনজ্বালায় নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণও।
ছবি: অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.