সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: রাজনৈতিক সৌজন্যের অনন্য নজির৷ ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির প্রচারে জনসংযোগে বেরিয়ে বিজেপির সক্রিয় কর্মীর বাড়িতে একেবারে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া করলেন মথুরাপুরের তৃণমূল সাংসদ চৌধুরি মোহন জাটুয়া৷ শনিবার দুপুরে তাঁকে নিজের হাতে পরিবেশ করে খাওয়ালেন ওই বিজেপি কর্মীর স্ত্রী৷ আর এরই ফাঁকে নিজেদের অভাব-অভিযোগের কথাও তুলে ধরলেন তাঁরা৷ যুযুধান দুই রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর এই সৌজন্যে সাক্ষী রইলেন ডায়মন্ড হারবার এলাকার মানুষজন৷
লোকসভায় দলের আশানুরূপ ফলাফল না হওয়ায় নতুন করে জনসংযোগের পথে হেঁটেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাই বিধানসভার আগে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজ্যজুড়ে প্রচারে নেমেছেন দলের বিধায়ক-সাংসদরা৷ এলাকায় এলাকায় চলছে এর প্রচার৷ শনিবার সেই কর্মসূচি নিয়েই পথে নেমেছিলেন মথুরাপুরের দীর্ঘদিনের তৃণমূল সাংসদ সিএম জাটুয়া৷ বেলা গড়িয়ে তখন দুপুর৷ সাংসদ সটান ঢুকে গেলেন রাঘদিঘির দাসপাড়া এলাকার ১৯০ নং বুথের একটি বাড়িতে৷ বাড়ির মালিক সক্রিয় বিজেপি কর্মী ও বুথস্তরের নেতা তপন কপাট৷ তাঁর স্ত্রী মিতালিও এলাকায় সক্রিয় বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত৷ এলাকার উন্নয়নে তাঁদের মতামত চান বর্ষীয়ান সাংসদ৷ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, স্থানীয় হাসপাতালের বেহাল দশা-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে সাংসদের কাছে নালিশ জানান তাঁরা৷
এরপরই চিত্রনাট্যে চমক৷ ভরদুপুরে সাংসদকে বাড়িতে ডেকে খাওয়ার আমন্ত্রণ জানান ওই বিজেপি দম্পতি৷ যা শুনে বেশ অবাক সিএম জাটুয়া নিজেই৷ তবে অভিজ্ঞ রাজনীতিক তখনই সবটা সামলে নিয়ে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন৷ মিতালিদেবী টেবিলে খাবারের থালা সাজিয়ে দেন৷ মেনু ছিল ভাত, মসুর ডাল, আলু ও উচ্ছেভাজা, পাঁপড়, আলুপোস্ত আর মাগুরমাছের ঝোল৷ খাওয়ার মাঝেই চলে গল্পগুজব৷ মিতালিদেবীর রান্নার প্রশংসা করেন সাংসদ৷ একটু লজ্জা পেয়ে মিতালিদেবী তাঁকে পালটা বলেন, ‘আপনার যে ভাল লেগেছে, তাতেই আমি খুশি৷’ খাওয়া শেষে সাংসদকে ঠান্ডা পানীয়ও দেওয়া হয়৷ এসব দেখে আশেপাশের মানুষজনের মধ্যে গুঞ্জন, ফিসফাস শুরু হয়৷ এমনকী সাংসদের সঙ্গে থাকা তৃণমূল কর্মীরাও হতভম্ব হয়ে যান৷
আসলে সম্প্রতি লোকসভা ভোটে রায়দিঘির এই ১৯০ নং বুথ, যেখানকার কর্মী তপন কপাট, সেখানে বিজেপির কাছে পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ চৌধুরি মোহন জাটুয়া৷ তবে তার প্রভাব আজকের এই আতিথেয়তা পর্বে একবারও পড়েনি৷ কপাট দম্পতি বরং বলছেন, ‘উনি সকলের সাংসদ৷ অতিথি হিসেবে আমাদের বাড়িতে দুপুরে এসেছিলেন৷ দুপুরে এলে কি তাঁকে না খাইয়ে ছাড়া যায়?’ আর সাংসদ বলছেন, ‘আমি তো এলাকার মানুষের ভোটেই জিতেছি৷ জনসংযোগে বেরিয়ে ওঁদের বাড়ি গিয়েছি৷ ওনারা অনুরোধ করলেন, খেয়ে যাওয়ার৷ অনুরোধ ফেলতে পারলাম না৷’ অনেকে এতে অবাক হলেও, বেশিরভাগ মানুষই বিজেপি কর্মী এবং সাংসদের ভূমিকার প্রশংসাই করেছেন৷ বলছেন, এমন সৌজন্যের নজির আরও তৈরি হোক৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.