স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতা: বাড়ির সামনেই কপালে গুলি লেগে দিদিকে পড়ে থাকতে দেখে ছুটে গিয়েছিলেন ঝুমকির ভাই রানা৷ দিবাকরকে একটি মন্দিরের পাশে ধরে ফেলেন তিনি৷ নিজেকে বাঁচাতে রানার দুই আঙুলেই কামড়ে দেয় দিবাকর৷ এর পরও পিঠে ব্যাগ নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে৷ ফের একটি ল্যাম্পপোস্টের কাছে তাকে ধরে ফেলেন এলাকার বাসিন্দারা৷ গণপিটুনিতে আহত হওয়ার পরও ঝুমকির ভাই রাজেশ দাস ওরফে রানাকে দিবাকর হুমকি দিয়ে বলে, “জেল থেকে ফিরে এসেই দেখে নেব তোকে৷”
দিবাকরের এই রূপের সঙ্গে বিশেষ পরিচিত নন রায়গঞ্জের সুভাষগঞ্জের বাসিন্দারা৷ তাই রায়গঞ্জ থেকে কলকাতায় এসে বান্ধবীকে গুলি করে খুনের চেষ্টা করেছে ‘ডাক্তারবাবু’ দিবাকর, তা জেনেই অবাক তাঁরা৷ একাধিক মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক৷ নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে মহিলাদের কাছে পাওয়ার চেষ্টা করত দিবাকর দে৷ সেনাবাহিনীতে চাকরি করত দিবাকর৷ চাকরি চলাকালীন মহিলাসঙ্গ ছাড়াও সে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দুর্নীতিতে৷ চাকরি যায় এই ‘কীর্তিমান’-এর৷ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কম ‘কীর্তিমান’ নন তাঁর বাবা তপন দে-ও৷ দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল তপন দে-র চাকরি যায় বছর তিনেক আগে৷ তাতেও অবশ্য অসুবিধা হয়নি দে পরিবারের৷ রায়গঞ্জ শহরের অদূরে সুভাষগঞ্জের বাসিন্দা তপন দে একটি অনুষ্ঠানবাড়ি তৈরি করে ফেলেন৷ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওই বাড়ি ভাড়াও দেন৷ সুভাষগঞ্জে নিজেদের তিনতলা বাড়িও রয়েছে তপন-দিবাকরদের৷ বাবার সূত্র ধরে পুলিশের একাংশের মদতেই দিবাকর দুষ্কর্ম করে বেড়াত বলে অভিযোগ উঠেছে৷
(ফেসবুকে ওসিকে ফাঁসানোর চেষ্টা, গুলিবিদ্ধ যুবতী)
সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর দিবাকর চলে আসে বাড়িতে৷ উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘিতে নিজেকে সেনা ডাক্তার বলে পরিচয় দিয়ে ডিসপেনসারি খুলে বসে৷ তাতে রোগীও হয়৷ কয়েক বছর আগে বিয়ে করে মালদহের এক তরুণীকে৷ পুলিশের দাবি, কোনওদিনই এমবিবিএস ছিল না দিবাকর৷ প্রতিবেশীদের দাবি, প্যারামেডিক্যাল কোর্স করে সে৷ অথচ নিজের দু’টি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দিবাকর দে দাবি করে যে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করেছে সে৷ একটি অ্যাকাউণ্টে আবার শিলিগুড়ির বাসিন্দা বলেও নিজেকে পরিচয় দেয়৷ গলায় স্টেথোস্কোপ নিয়ে ছবি পোস্ট করে৷ ডাক্তার হিসাবে দরিদ্র রোগীদের সে সাহায্য করে, এই দাবি তুলেও বিভিন্ন ছবি পোস্ট করে দিবাকর৷ কীভাবে স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হয়, সেই বিষয়েও ফেসবুকে বিভিন্ন্ পোস্ট করত সে৷ স্মার্ট চেহারার দিবাকরের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেখেই বিশ্বাস করেন বহু যুবতী৷ বিশ্বাস করেছিলেন ঝুমকি দাসও৷ তাই দিবাকরের হাত ধরে চলে যান রায়গঞ্জ৷ ঝুমকি বুঝতেও পারেননি যে, দিবাকর বিবাহিত৷ নিজের বাড়িতে তাঁকে না নিয়ে গেলেও এলাকার বহু বাসিন্দাই দিবাকরের সঙ্গে ঝুমকিকে দেখেন৷ ঝুমকির অভিযোগ, দিবাকরের জন্যই তিনি ফের অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন৷ একই সঙ্গে ঝুমকি ছাড়াও বহু মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখত দিবাকর৷ এমনকী, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের সঙ্গে সে সহবাসও করে বলে অভিযোগ৷ তার জন্য ভুয়া রেজিস্ট্রিও করত৷ কীর্তিমান স্বামীকে বারণ করেও লাভ না হওয়ায় ডিভোর্সের মামলা শুরু করেন. স্ত্রী৷ স্ত্রীর উপর দিবাকর অত্যাচারও চালাত৷ একদিকে, ‘পুলিশের ছেলে’ ও অন্যদিকে নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দিয়ে রায়গঞ্জ-সহ উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন থানা ও কলকাতা পুলিশের একাংশের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক তৈরি করে সে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.