দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: আকাশের মুখভার। মাঝেমধ্যে ঝিরঝিরে বৃষ্টির দেখাও মিলছে। ঠিক যেমন বর্ষাকালে হয় আর কি! তবে ক্যালেন্ডার দেখলে আপনি টের পাবেন, এ মোটেও বর্ষা নয়। আদতে ভরা বসন্ত। তা সত্ত্বেও ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, কুলপি, নামখানায় দেখা মিলছে ঝাঁক ঝাঁক ইলিশের। বর্ষা না হওয়া সত্ত্বেও ইলিশের দেখা পেয়ে বেজায় খুশি আমজনতা। দোলের মেনুতে রূপোলি শস্যের দেখা মেলার আশায় খিদে বাড়তে শুরু করেছে খাদ্যরসিকদের।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন নদী সাগরের সঙ্গে যুক্ত। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় নদীসংলগ্ন এলাকাগুলিতে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ঢুকছে ইলিশের দল। বিশেষ করে মাতলা, মুড়িগঙ্গা, কুলপি বিভিন্ন এলাকাতে দেখা মিলেছে ইলিশের। মৎস্যজীবীরা বলেন, “কয়েকদিন ধরে জলের রং নীলচে হয়ে আছে। লালা লালা ভাব দেখা দিয়েছে সেই জলের মধ্যে। ফলে ইলিশের একটা আগমনের ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। মঙ্গলবার জাল ফেলতেই মৎস্যজীবীরা ইলিশ পান। কোনও কোনও মৎস্যজীবী ২৫-৩০ কেজি করেও ইলিশ ধরতে পেরেছেন। ইলিশ ইতিমধ্যেই বাজারজাতও হয়ে গিয়েছে।”
এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজয় মাইতি বলেন,”কাকদ্বীপ, নামখানা, কুলপি, ডায়মন্ড হারবারে এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মূলত যেসব নদী যোগ হয়েছে সাগরের মোহনাতে সেই নদীগুলিতে ঢুকে পড়েছে ইলিশ। প্রতিটি ইলিশের পেটে ডিম ভরতি। এখন সাধারণত ইলিশের পেটে ডিম থাকে না। কিন্তু বারবার ঘূর্ণাবর্তের কারণে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এই ডিমের প্রাদুর্ভাব বলেই মনে করা হচ্ছে। আর এই বৃষ্টির কারণে ইলিশ ডিম ছাড়তে সমুদ্রের মোহনা থেকে নদীর গভীরে আসছে।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এইভাবে বৃষ্টি হতে থাকে তবে আগামী দিনে আরও ইলিশ পাওয়া যাবে। কিন্তু তাতে ক্ষতিও আছে। কারণ, মা ইলিশগুলি জালে ধরা পড়ার ফলে বর্ষার মরশুমে ইলিশের ঘাটতি দেখা দেবে। তখন সমুদ্রে জাল ফেলে মাছের জন্য হাহাকার করতে হবে। বিভিন্ন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এই সময় মাছ যেহেতু ডিম ছাড়ার জন্য তৈরি হয়, তাই মাছ ধরা হয় না। শুধু ইলিশ নয় হাজার রকম প্রজাতির মাছ এই সময় ডিম ছাড়ে এবং বাচ্চা তৈরি করে। কিন্তু এখন এত তাড়াতাড়ি ইলিশ মাছের পেটে ডিম আসায় সত্যিই সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারণ, জালে ধরা পড়ে যাচ্ছে ডিম-সহ মা ইলিশ। এবছর ইলিশের মরশুমে এমনিতেই খরা ডেকেছিল। সেভাবে জোটেনি ইলিশ। সাধারণত বাজারগুলিতে ভরা মরশুমেও দেখা যায়নি রুপোলি সরষের। কিন্তু দেখা মিলছে এখন।
ডায়মন্ড হারবার ও ক্যানিংয়ে জেলার সব থেকে বড় মৎস্য আড়ত। এই আড়তগুলিতেও গত কয়েকদিন ধরে যথেষ্ট পরিমাণে ইলিশ আসছে। যেসব ইলিশ এই আড়তগুলিতে আসছে তার ওজন ৮০০-১২০০ গ্রামের মধ্যে। এইসব ইলিশগুলি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি এক হাজার টাকা দরে। দাম দিয়ে সেইসব ইলিশ কিনে নিচ্ছেন মাছে-ভাতে বাঙালি। কেউ কেউ আবার এই ইলিশ কিনে দোল উৎসবে খাবেন বলেও পরিকল্পনা করছেন। সাধারণত দোল উৎসবের সময় ইলিশ পাওয়াই যায় না। তাই আচমকা ইলিশ মাছের দেখা মেলায় দোলের মেনুও জমে যাবে বলেই আশা খাদ্যরসিকদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.