হুড়ার ব্যাংকে চুরির জন্য নানান যন্ত্রপাতি। ছবি:সুনীতা সিং।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ব্যাংকে চুরি করতে এসে জ্যামার। সেই সঙ্গে এন্ডোস্কপি। এছাড়া ব্যাগে ছিল টর্চ, তার, ভল্ট কাটার ড্রিল, হাইড্রোলিক কাটার, অ্যাডপ্টার, বাল্ব। পুরুলিয়ার হুড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে চুরির চেষ্টার ঘটনায় শনিবার রাতে উদ্ধার হওয়া ব্যাগ ভরতি এসব জিনিসপত্র দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে উঠেছিল পুলিশের। ঘটনার তদন্তে নেমে জানতে পারে, এই ঘটনায় ধৃত সমীর আনসারি আমির খানের ‘ধুম থ্রি’ হিন্দি সিনেমা দেখে এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে চুরির চেষ্টা করে বলে অভিযোগ।
এন্ডোস্কপি ক্যামেরা ব্যবহার করে কিভাবে ভল্ট খোলা যায় তা রপ্ত করেছিল ইউটিউব দেখে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ব্যাংকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভেতরে এডাপ্টর, ব্যাটারির সাহায্যে আলো জ্বালিয়ে শনি-রবি দু’দিন ধরে অপারেশন চালিয়ে ভল্ট-সহ ব্যাংক সাফ করার পরিকল্পনা ভেস্তে যায় ওই ব্যাংকের বিপদ ঘন্টিতে। তার কেটে বিদ্যুৎ সংযোগ করতে গিয়েই ওই ঘণ্টি বাজে। না হলে শহর পুরুলিয়ার সোনার দোকানের ডাকাতির ঘটনা থেকেও বড়সড় চুরির ঘটনা ঘটে যেত এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। এমন কথা বলছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশই।
ধৃত যুবক চুরি করার জন্য যে ভাবে আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে হিন্দি সিনেমার ভাবনাকে কাজে লাগিয়েছে তাতে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জানিয়েছে, অপরাধের কৌশল ক্রমশ বদলে ফেলছে দুষ্কৃতীরা। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই ব্যাংকে চুরির অপারেশন সারতে ধৃত এন্ডোস্কপি, জ্যামার নিয়ে এসেছিল। একটি হিন্দি সিনেমা দেখে এই চুরির চেষ্টা করেছিল ব্যাংকে। ওই সব আধুনিক যন্ত্রপাতি কীভাবে চুরির কাজে প্রয়োগ করবে তা জানতে ইউটিউব দেখে দুষ্কৃতী। প্রাথমিকভাবে জেরায় আমরা এই সবকিছুই জানতে পেরেছি। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”
সোমবার রাতে হুড়ার দুমদুমি গ্রামের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর মঙ্গলবার তাকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। ওই দুষ্কৃতী এইট পাস। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই অপরাধে হাত পাকাতে ওই দুষ্কৃতী ওয়েব সিরিজ দেখত। আর তা দেখেই ‘সোলো ক্রাইম’ করার ছক কষে সে। একাই যে একটি ব্যাংককে সাফ করা যেতে পারে সেই জন্যই শনিবারের রাতকে বেছে নিয়েছিল ওই ধৃত। যাতে ব্যাংকের ভেতরে থেকে রবিবার ছুটির দিনকেও কাজে লাগাতে পারে। শাটার ভেঙে ঢুকলেও এমন ভাবে বাইরে থেকে তালা লাগানো ছিল যে বোঝার উপায় ছিল না ভিতরে কেউ রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন রাতে ব্যাংকের বিপদ ঘন্টি বাজার পরেই সে ব্যাংকের ভেতর থেকে সাটার খুলে বেরিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভল্ট কাটার ড্রিলের দাম ৭৩ হাজার টাকা।
যা অনলাইনে কিনেছিল সে। ওই উদ্ধার হওয়া ভল্টের নম্বর থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দুষ্কৃতী পর্যন্ত পৌঁছে যায় পুলিশ। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জানিয়েছে, ভল্ট খোলার জন্য যে ড্রিল ছিল সেখানে এন্ডোস্কপি ব্যবহার করে তার সঙ্গে মোবাইলকে যুক্ত করে মোবাইল ক্যামেরায় দেখে সহজে ওই ভল্ট খোলার ছক কষে ছিল বলে পুলিশি জেরায় জানিয়েছে। সেই সঙ্গে এই অপারেশনে জ্যামার ব্যবহার করতে চেয়েছিল যাতে তার গতিবিধির খবর কোনওভাবেই অন্যত্র না জানানো যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.