কিংশুক প্রামাণিক: গোটা নারায়ণগড় তখন তাঁর অপেক্ষায়৷ জনস্রোতে ভেসে যাচ্ছে তাঁর সভা৷ দ্বিতীয়বার শপথ নেওয়ার পর এদিনই জেলার উন্নয়নী সফর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ কী বলবেন, সেদিকে তাকিয়ে ছিল রাজ্যবাসী৷
কিন্তু এদিন সকাল থেকেই তাঁর মন ভাল নেই৷ কেরোসিনের বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন গরিব মানুষ৷ সকালে নবান্নে এসেই পড়লেন সেসব নিয়ে৷ সম্ভাব্য সবরকম পদক্ষেপ নিয়ে ভাবনা৷ সমস্যা হচ্ছে, কেরোসিন পুরোপুরি কেন্দ্রের আওতায়৷ তাই নারায়ণগড় রওনা হওয়ার আগে কড়া চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে৷ তাঁর স্পষ্ট কথা, “গরিব মানুষকে কেরোসিন থেকে বঞ্চিত করা যাবে না৷” সভায় এসেও সেই ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি৷
কাজের স্রোতেই এত বড় জয়৷ যাঁদের সমর্থনে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা সেই সাধারণ মানুষের পক্ষেই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই চলছে, এবং সেটাই যে তিনি চালিয়ে নিয়ে যেতে চান তা স্পষ্ট৷ নারায়ণগড়ের সভা থেকেই ফের শুরু হয়ে গেল তাঁদের জন্য উন্নয়নসূচি৷ বললেন, “কর্মই ধর্ম৷ কর্মই নেশা৷ কর্মই পেশা৷ কাজ করলে যে জেতা যায় তা প্রমাণিত৷ কুৎসা করে কাজ হয় না৷ এটা সত্যের জয়৷ চক্রান্ত মুছে যায়৷” এই জয় জনতাকে উৎসর্গ করে বলেন, “কাজই একমাত্র কাজের প্রতিযোগিতা৷ তাই যে কাজ আমরা করেছি তা এগিয়ে নিয়ে যাব৷ যেসব প্রকল্প চালু হয়েছে সবই স্বমহিমায় চলবে৷ আগামি দিনে বাংলাকে বিশ্ববাংলা করাই লক্ষ্য৷”
কথা দিয়েছিলেন, বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে পরাজিত করলে এই নারায়ণগড় দিয়েই শুরু করবেন জেলা সফর৷ এসে খাবেন এখানকার ডালবড়াও৷ এদিন কথা রাখলেন তিনি৷ যে সূর্যকান্তবাবু বলেছিলেন, বাংলার মানুষ এবার ছক্কা মারবে, সেই নারায়ণগড়ে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন তাঁর আরও একদফা কর্মযজ্ঞ৷ ঘটনাচক্রে ২০১১ সালে জেতার পর নারায়ণগড়ের পাশে নয়াগ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর সফর৷ সেই অর্থে বজায় রইল পরম্পরা৷ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “আপনারা কথা রেখেছেন৷ এবার আমরাও কথা রাখব৷” সভায় এদিন একবারের জন্যও সূর্যকান্ত মিশ্রর নাম উচ্চারণ করেননি মমতা৷ বলেননি রাজনৈতিক শব্দও৷ তবে মনে করিয়ে দিয়েছেন, দীর্ঘদিন বিধায়ক, মন্ত্রী থেকেও এলাকার জন্য কিছুই করেননি সিপিএম নেতা৷ তিনি করবেন৷
পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে সঙ্গে নিয়ে মমতা এদিন রওনা হন নারায়ণগড়৷ সঙ্গে আসার কথা ছিল দলের সাংসদ রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিরও৷ কিন্তু তিনি আগেই পৌঁছে যান সভার প্রস্তুতি দেখতে৷ এই সরকারের প্রথম জেলা সফর৷ তাই যাত্রাপথে বহু জায়গায় মানুষ ছিলেন অপেক্ষায়৷ মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় থামেন৷ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন৷
সভার শুরুতেই বক্তৃতা রাখেন সদ্য মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়া শুভেন্দু অধিকারী৷ যথারীতি মঞ্চ থেকে শুরু হয়ে যায় উন্নয়ন প্রকল্প৷ ঘোষণা হয় নারায়ণগড়ে মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ও কলেজের৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই ঐতিহাসিক জয় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে৷ আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে এখানে এসেছি৷ আপনারা আবার সুযোগ দিয়েছেন৷ চেষ্টার কোনও ত্রূটি রাখব না৷
অনেক কুৎসা-চক্রান্ত রুখে দিয়ে ৪৯ বছরে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছি৷ মানুষকে তাই কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই৷” অন্যদিকে তখন ম ম করছে ডালবড়ার গন্ধ৷ বিতরণ চলছে জনতার মধ্যে৷ যেহেতু রমজান চলছে, তাই অবশ্য মঞ্চে উঠতে দিলেন না তিনি৷ তাঁর কথায়, কাজ আর সুশাসনের মধ্যে দিয়েই জয় এসেছে৷ যে জয় আসলে মানুষের জয়৷ জেলার বিধায়ক ও জনপ্রতিনিধিদের দাঁড় করিয়ে মানুষের দেওয়া শিক্ষার কথা মনে করিয়ে বললেন, “উন্নয়ন ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় কোনও লক্ষ্য নেই৷ ঐক্যবভাবেই তা করতে হবে৷”
আজ, মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামে মুখমন্ত্রীর পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠক৷ থাকবেন সচিব ও মন্ত্রীরা৷ আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকে তিনি থাকবেন৷ মোট ২১১ আসনে জয়৷ প্রবল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরা৷ দায়িত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বুঝেছেন, মানুষ সঙ্গে থাকলে কোনও সমস্যা নেই৷ তাঁর ভাবনা আরও উন্নয়ন৷ সেকথা বোঝাল নারায়ণগড়৷ তাই সেখানে বিধায়ক-সহ জনপ্রতিনিধিদের তাঁর বার্তা, “মানুষের সঙ্গে মিশে যান৷ মানুষই সব৷” তিনি জানেন হাজার হাজার যুবক তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে৷ তাই পরিবর্তনের নারায়ণগড় থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, “আস্থা রাখুন৷ বাংলার ভাই-বোনেদের ভবিষ্যত আমরাই গড়ে দেব৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.