ছবিতে ভঞ্জ পরিবারের গৃহবধূ গৌরীদেবী।
সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর পদধূলি পড়েছিল বাগনানের দেউলগ্রামে। সৎমা সুশীলাসুন্দরী দেবীর সঙ্গে দেখা করতে একবার দেউলগ্রামের মামার বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। ৭২-তম স্বাধীনতা দিবসে অগ্নিযুগের বিপ্লবীকে সম্মান জানাতে চান গ্রামবাসীরা। গ্রামে ক্ষুদিরামের বসুর মূর্তি স্থাপনের দাবি তুলেছেন তাঁরা। একই দাবি সুশীলাসুন্দরী দেবীর বাপের বাড়ির বর্তমান প্রজন্মেরও।
[রাষ্ট্রপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পড়ুয়ার উত্তরে চোখ কপালে প্রশ্নকর্তার]
স্থানীয় গবেষক পবিত্র পাঁজা জানিয়েছে, অত্যাচারী ইংরেজ বিচারক কিংসফোর্ডকে হত্যার ছক কষেন অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা। প্রফুল্ল চাকীর পাশাপাশি কিংসফোর্ডকে মারার দায়িত্ব বর্তায় ক্ষুদিরামের উপরেও। এই ঘটনার কিছুদিন আগেই সৎমা সুশীলাসুন্দরী দেবীকে দেখতে দেউলগ্রামে আসেন কিশোর বিপ্লবী। এদিকে তখন বিপ্লবীদের ধরতে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। একজন বিপ্লবী বাগনানে এসেছে, গুপ্তচর মারফৎ সেই খবর গিয়ে পৌঁছয় ইংরেজ পুলিশের কাছে। ক্ষুদিরাম বসুকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাগনান থানায়। মামার বাড়িতে আর থাকা হয়নি। রাত কেটেছিল থানার লকআপেই। পরে অবশ্য তাঁকে ছে়ড়ে দেয় পুলিশ। বর্তমানে সেই লকআপ বাগনান থানার পুরনো ভবনের অন্তর্গত। এদিকে কিংসফোর্ড সাহেবকে হত্যার পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়। ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী ছোড়া বোমায় মারা যান এক ইংরেজ মহিলা ও তাঁর মেয়ে। পালিয়ে গিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। ধরা পড়েন ক্ষুদিরাম। ১৯০৮-র ১১ আগস্ট ফাঁসিকাঠে প্রাণ দেন অকুতোভয় এই বিপ্লবী।
ক্ষুদিরাম বসুর ভাগ্নে ললিতমোহন রায়ের একটি অপ্রকাশিত রচনা থেকে জানা যায়, ১৮৯৫ সালে প্রয়াত হন ক্ষুদিরাম বসুর মা লক্ষ্মীপ্রিয়াদেবী। ফের বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন ত্রৈলোক্যনাথ বসু। বাগনানের দেউলগ্রামের ভঞ্জ বাড়ির সাত বছরের বালিকা সুশীলাসুন্দরীকে বিয়ে করেন। কিন্তু, দ্বিতীয় বিয়ের পর বেশিদিন বাঁচেননি তিনি। ১৮৯৭-তে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ত্রৈলোক্যনাথ বসু। ক্ষুদিরামের তিন দিদি। বড় দুই দিদি অপরূপা ও সরোজিনীকে বিয়ে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন ত্রৈলোক্যনাথবাবু। তবে ছোট মেয়ে ননিবালার বিয়ের আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুর সময় ক্ষুদিরামে বয়স ছিল মাত্র আট বছর। বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রায় সমবয়সীই ছিলেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর বাপের বাড়ি দেউলগ্রামেই ফিরে এসেছিলেন সুশীলসুন্দরী দেবী। সেই সৎমাকে দেখতেই ক্ষুদিরামের দেউলগ্রামে আসা। সেইসময় পার্শ্ববর্তী বাকসি গ্রামেও গিয়েছিলেন তিনি। দেউলগ্রামের ভঞ্জ বাড়িতে গেলে এখনও মুখে মুখে ফেরে বিপ্লবীর অজানা সব কাহিনী। কথা বলতে বলতে যেন পুরোনো দিনেই ফিরে গেলেন ভঞ্জ পরিবারের গৃহবধূ গৌরীদেবী(৭৮)। সুশীলাদেবীর ব্যবহৃত ঘরটির অস্তিত্ব আজ আর নেই। তবে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে চান দেউলগ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামে বিপ্লবীর এক মর্মর মূর্তি স্থাপন করার দাবি তুলেছেন তাঁরা । ৭২-তম স্বাধীনতা দিবসে মহান বিপ্লবীকে এভাবেই সম্মান জানাতে বদ্ধপরিকর সকলে ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.