ফাইল ছবি।
গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: রেশন দুর্নীতিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির তল্লাশি অভিযান ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির সরবেড়িয়া। আক্রান্ত হন ইডির আধিকারিকরা। চক্রান্ত করে তল্লাশির অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূল নেতার অনুগামীরা। এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয় তদন্তকারী আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। আর ইডির উপর এমন তাণ্ডবের পর প্রশ্ন উঠতে থাকে কে এই শেখ শাহজাহান?
জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ কর্মাধ্যক্ষের পাশাপাশি সন্দেশখালি ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শেখ শাহজাহান। এই মুহূর্তে ইডির হেফাজতে থাকা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (Jyotipriya Mallick) ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিনি। শেখ শাহজাহানের উত্থান বাম জমানার শেষ দিকে। ২০০৩-এ সন্দেশখালি-সরবেড়িয়া রুটে ট্রেকারে হেল্পারের কাজ করতেন শাজাহান। পাশাপাশি পঞ্চায়েত প্রধান মামার দাক্ষিণ্যে মাছের ভেড়ির ব্যবসাও শুরু করেন। পরে নাকি সেই মামাকেই পরে খুনের হুমকিও দেন। শাসনে যেমন ভেড়ি নিয়ন্ত্রক ছিলেন সিপিএমের মজিদ মাস্টার, তেমন সন্দেশখালির ভেড়ি নিয়ন্ত্রণ ছিল মামা-ভাগ্নে জুটির হাতেই। ক্রমশ ফুলে ফেঁপে ওঠে এই জুটি। তবে নিজের একটা রবিনহুড মার্কা ইমেজও ততদিনে তৈরি করে ফেলেছিলেন শাহজাহান।
এলাকার অনেকে বলেন, শেখ শাহজাহান এ রাজ্যের লোকই নন। তিনি অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ থেকে এসেছেন এখানে। বামফ্রন্ট জমানার শেষ দিকে স্থানীয় বিধায়ক অনন্ত রায়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন এই শাহজাহান। কাঠ ও গরু পাচারের পাশাপাশি মানব পাচারের অভিযোগও রয়েছে শাহজাহানের বিরুদ্ধে। এসবের মাধ্যমেই তাঁর প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল ঘটে। ক্ষমতায় আসে তৃণমূল (TMC)। বদলায় পরিস্থিতি। মাথার উপর থেকে হাত সরে যায় বাম বিধায়কের। বিপাকে পড়েন শাহজাহান। তার পর ২০১৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। বাম আমলে অবশ্য শাহজাহান কোনও পদ পাননি। কিন্তু সূত্রের খবর, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকই শাহজাহানকে নিয়ে এসেছিলেন জোড়াফুলে। তাঁর সাহায্যেই সাংগঠনিক পদ পান শাহজাহান।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে টলিউড সেলিব্রিটি নুসরত জাহানকে (Nusrat Jahan) সন্দেশখালিতে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। সংখ্যালঘু ভোট একত্রিত করে নুসরতকে জেতানোর ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। যার পুরস্কার স্বরূপ পঞ্চায়েত ভোটে শেখ শাহজাহানকে প্রার্থী করে তৃণমূল। জিতে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হন তিনি।
ইডির (ED) দাবি, রেশন দুর্নীতি কাণ্ডেও যোগ রয়েছে শাহজাহানের। সেই সূত্রেই তাঁর বাড়িতে শুক্রবার তল্লাশি চালাতে যান ইডির আধিকারিকরা। এদিন শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশির জন্য ইডি আধিকারিকরা সরবেরিয়া পৌঁছতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন দাপুটে এই নেতার অনুগামীরা। কেন না জানিয়ে আচমকা হানা, এই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূলের কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
অভিযোগ, ইডির আধিকারিকদের মারধর করেন তৃণমূল নেতার অনুগামীরা। মাথা ফাটে একজনের। ব্যাপক ভাঙচুর করা হয় গাড়িতে। এর পর রীতিমতো ধাওয়া করে ইডি আধিকারিকদের এলাকা ছাড়া করা হয়। বাইক, অটো, হাতের কাছে যা ছিল তাতে চেপেই এলাকা ছাড়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও। আক্রান্ত হয় সংবাদমাধ্যমও। ভেঙে দেওয়া হয় ক্যামেরা। ইডির আধিকারিকরা এলাকা ছাড়ার পরও উত্তেজনা বজায় থাকে এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল বাহিনী। ইডি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল যে তাঁদের পক্ষে আর তল্লাশি চালানো সম্ভব হয়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.