Advertisement
Advertisement
ফণী

পুরীর মন্দিরে বাবা, বার্নপুরের মন্দিরে ছেলে; জগন্নাথদেবই ভরসা দুই সেবাইতের

ফণী বাড়িয়েছে দুশ্চিন্তা।

Desperate search for missing kins after Fani havoc in Odisha
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:May 4, 2019 9:04 pm
  • Updated:May 4, 2019 9:04 pm  

চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: শুক্রবার সকালে শেষবারের মতো ফোনে কথা হয়েছে বাবা মায়ের সঙ্গে। তারপর থেকে মোবাইল ফোনে আর পাওয়া যায়নি। ফণীর আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁকে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই মনটা ছটফট করছে ব্রজকিশোর দাসের। ব্রজকিশোর বার্নপুর উৎকল সমাজের জগন্নাথ মন্দিরের মূল পুরোহিত।

বাবা কৃষ্ণচন্দ্র দাস পুরী মন্দিরের পাণ্ডা। মা জয়শ্রী মহাপাত্র জগন্নাথদেবের সেবাইত। পুরী মন্দিরের পশ্চিম দুয়ারের কাছেই তাঁদের বাড়ি। মাত্র পাঁচ মাস হল বার্নপুরে এসেছেন বয়স বাইশের ব্রজকিশোর। ফণীর দুর্যোগ গ্রাস করেছে শ্রীক্ষেত্র পুরীধামকে। তাই শুক্রবার সকাল থেকেই উদ্বিগ্ন ব্রজকিশোর দাস। ছটফট মন নিয়েই জগন্নাথ দেবের পুজো করেছেন। আরতি করেছেন। প্রার্থনা করেছেন পুরী যেন অক্ষত থাকে। বাবা মা ভাই বোনেরা যেন সুস্থ থাকে। কীই বা করার আছে ভগবানের নামজপ করা ছাড়া। ব্রজকিশোর বলেন, “বৃহস্পতিবারও বিয়ের করার জন্য জোর দিচ্ছিল বাবা মা, আমি এড়িয়ে যাই।”

Advertisement

[ আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শুনে গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী, তারপর… ]

শুধু ব্রজকিশোর দাস নয় বার্নপুর উৎকল সমাজের মন্দিরের সেবাইত রঞ্জন কুমার রাউত, নিরোজ দাস, পণ্ডিত পরমানন্দরাও দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। এঁদের কারওর বাড়ি ভুবেনশ্বরের জাজপুর, কারোর জগৎসিংপুরে। পুরী ও ভুবেনশ্বরের কাছাকাছি যাঁদের আত্মীয় রয়েছেন তাঁরা শনিবার পর্যন্ত বাড়ির লোকের খবর পাননি। শুধু বার্নপুর নয়, কুলটি শিমূলতলায় রয়েছে উৎকল সমাজের জগন্নাথদেবের মন্দির ও আবাসন এলাকা। কুলটিতে কাকা সুজিত কুমারের বাড়ি দিন সাতেক এসেছেন বি টেকের ছাত্রী জ্যোৎস্না সেনাপতি। বাড়ি পশ্চিম ওড়িশার সম্বলপুরে হলেও ভাই জয়েশা সেনাপতি রয়েছেন ভুবেনশ্বরে। এখানকার কিট বা কলিঙ্গ টেকনিক্যাল কলেজ হোস্টেলের এম টেক করছেন তিনি। ফেসবুকে সেই কলেজ ভেঙে পড়ার ছবি দেখেছেন জ্যোৎস্না। তিনি বলেন, “দাদার জন্য চিন্তা হচ্ছে। হোস্টেলের জানালা ভেঙে যেতে দেখেছি। ওপরের শেড উড়তে দেখেছি। ফোনে পাচ্ছি না। খুব চিন্তা হচ্ছে।” তিনি জানান মা বাবারা ভাল আছেন। সেখানে তেমন কিছু হয়নি। বার্নপুরের তিনশো ওড়িয়া পরিবার ও কুলটিতে পনেরোটি ওড়িয়া পরিবার উদ্বিগ্ন রয়েছেন তাঁদের আপনজন ও নিকট আত্মীয়দের জন্য।

উলটোদিকে আসানসোলে বহু পড়ুয়া ভুবনেশ্বরে রয়েছেন। ফণীর ভয়ঙ্কর রূপ দেখে তাঁদের বাবা মা আত্মীরা রয়েছেন চিন্তায়। শুধু পড়ুয়া নয়, কর্মসূত্রে ওড়িশার বন্দর-শহর পারাদ্বীপেও রয়েছেন অনেক আসানসোলবাসী। যাঁরা পরিবার নিয়ে গৃহবন্দি রয়েছেন সেখানে। আসানসোলের ব্যাংককর্মী ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় বলেন, “ছেলে কৃষ্ণের খোঁজ পাচ্ছিলাম না শুক্রবার সকাল থেকে। মাঝ রাতে ফোন আসে- বাবা চিন্তা কোরো না। আমি ভাল আছি।” জানা গিয়েছে, কৃষ্ণ ভুবনেশ্বরের কিট হোস্টেলে আছে। কোনও এক বন্ধুর পাওয়ার ব্যাংকে মোবাইল ফোন অন করে তিরিশ সেকেন্ডের ওই বার্তাটি দিতে পেরেছে।

[ আরও পড়ুন: রাজ্যে ফের গরমে মৃত্যু, হুগলিতে প্রাণ গেল কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ও পুলিশকর্মীর ]

কুলটির স্কুল শিক্ষক কিংশুক মুখোপাধ্যায়ও উদ্বিগ্ন ছিলেন ভুবেনশ্বরে থাকা ছেলে অর্জুনকে নিয়ে। শনিবার খোঁজ পেয়েছেন ঠিক আছে ছেলে। কিন্তু কীভাবে মোকাবিলা করবে পরিস্থিতির জানা নেই তাঁর। ইফকো সার কারখানায় কাজ করার সুবাদে কুলটি পুইতণ্ডি পরিবার পারাদ্বীপে থাকেন। নিয়ামতপুরের কাউন্সিলর বাদল পুইতণ্ডি জানান বৌদি ও ভাইপোর পরিবার নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। যোগাযোগ হয়নি। তিনি বলেন, “শুনেছি মিলিটারি ও হেলিকপ্টার নেমেছে পারাদ্বীপে। খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা চলছে সবরকমভাবে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement