দীপঙ্কর মণ্ডল: বিদেশে পড়াশোনার ইচ্ছায় কি তাহলে মাটি চাপা দিতে হবে? আর ক’টা দিন পরে অন্তত করোনা এলে ফাইনাল পরীক্ষাটা হয়ে যেত। উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর- এমন প্রশ্ন ঘুরছে সমস্তস্তরের ছাত্রছাত্রীদের মনে। বাড়ছে মনের চাপ। আসছে অবসাদ।
অন্যদিকে গেরস্তবাড়ির একচিলতে ঘর। ২৪ ঘণ্টা বাবা, মা ও ভাইবোনের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি। ঘুম ভাঙা থেকে ঘুমাতে যাওয়া ইস্তক খিটমিট। বেড়াতে যাওয়া, খেলাধুলো আর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডার পাট শিকেয় উঠেছে। কোভিড-১৯ ভাইরাস ও লকডাউনে আচমকা এই ঘরবন্দি দশায় ছাত্রছাত্রীদের একটি বড় অংশের মানসিক স্থিতি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে।
অবসাদগ্রস্ত পড়ুয়াদের সুরাহায় এগিয়ে এসেছে কলকাতা ও সিধো কানহো বিরসার মত কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। মনোবিজ্ঞান এবং ফলিত মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকরা ছাত্রছাত্রীদের মনের পরিচর্যা ও কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। কলকাতার উপাচার্য অধ্যাপক সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমাদের ছাত্রছাত্রীরা ফোন করে মনোবিদদের পরামর্শ পাচ্ছেন। নিখরচায় তাঁদের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে।” সিধো কানহোর উপাচার্য অধ্যাপক দীপক কর জানিয়েছেন, “আমরা গোটা রাজ্যের স্কুলস্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সবার কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। মেল করে, হোয়াটসঅ্যাপে বা ফোনে নিখরচায় মনে অসুখ সারানো হচ্ছে। সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করছেন আমাদের অধ্যাপকরা”
‘তালাবন্ধ’ দেশে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ঝাঁপ ফেলেছে। শুধু ক্লাস নয়, স্থগিত হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষাও। অনেকেরই বিভিন্ন সংস্থায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কেউ বা বিদেশে যাবেন বলে ঋণ নিয়েছেন। সব এখন বিশবাঁও জলে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন জুলাই মাসেও স্কুল বন্ধ থাকবে। এমতাবস্থায় বহু ছাত্রছাত্রী মানসিক উদ্বেগ ও অশান্তিতে ভুগছেন। কারও কারও উপর ভর করছে গভীর অবসাদ। বিষয়টি জেনেই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি বিনামূল্যে অনলাইন কাউন্সেলিংয়ের দরজা খুলেছে।
কলকাতার ১৩ জন অধ্যাপক প্রক্রিয়াটিতে নেমে পড়েছেন। আশাব্যঞ্জক সাড়াও মিলছে। মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোমদেব মিত্র জানিয়েছেন, “দীর্ঘ লকডাউনে ছাত্রছাত্রীরা নানা রকম সমস্যায়। অনেকে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। কেরিয়ার নিয়ে অনেকে দুশ্চিন্তা করছে। পরীক্ষা নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। আমরা মানসিকভাবে ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। দরকারে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছেও পাঠানো হচ্ছে।”
দিশাহারা পড়ুয়াদের কীভাবে আশ্বস্ত করা হচ্ছে? অধ্যাপকরা জানিয়েছেন, ফোনে অনেকটা সময় নিয়ে কথা শোনা হচ্ছে। প্রথম যৌবনে পা দেওয়ার পর অনেকের কথা বলার লোক থাকে না। তারা বুঝতে পারে না নিজেদের সমস্যার কথা কাকে বলবে। ফোনে ধৈর্য ধরে সমস্যার কথা শুনে সমাধান বাতলে দিচ্ছেন অধ্যাপকরা। সোমদেববাবু জানিয়েছেন, “কয়েকদিন আগে এক ছাত্রী বলল, তার মনে হচ্ছে তার হাতের উপর দিয়ে সবসময় কোনও পোকা হেঁটে যাচ্ছে। আরেকজন বলল সে ভুলে যাচ্ছে দরজা বন্ধ করেছে কিনা। হাত ধুয়েছে কিনা। এগুলো অবসেসিভ ডিসঅর্ডার। আমি তাদের সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। পরে জেনেছি তারা ওষুধ খেয়ে ভাল আছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.