তরুণকান্তি দাস: হাতে হাজার নোটের লাখ টাকার বান্ডিল৷ সমস্ত ফর্ম পূরণ করে কাউন্টারে জমা দেওয়ার সময় ব্যাঙ্ক কর্মী জানালেন, একটা কাগজে নোটের নাম্বারগুলি নিখে দিন৷ পিছনে তখন শতাধিক গ্রাহক৷ লাইন থেকে বেরিয়ে গেলে ফের ঘণ্টাকয়েক কাবার৷ তবে? কোনও ব্যাঙ্কে এই হ্যাপা নেই৷ যাও৷ ডিপোজিট ফর্ম ভরো৷ টাকা দাও৷ তা হলে?
বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টাকা জমা করাতে গিয়ে কর্মচারী শুনলেন, তাঁর স্বাক্ষরিত পরিচয়পত্র লাগবে৷ কিন্তু অ্যাকাউন্টে তো প্যান নম্বর দেওয়া আছে? উঁহু৷ কাজ হবে না, এখন অন্যের আমানতে টাকা জমার ক্ষেত্রে যিনি দিতে এসেছেন তাঁর সুলুক-সন্ধান রাখবে ব্যাঙ্ক৷ কেন না যদি পরে তিনি অস্বীকার করেন তবে গ্রাহক তো ফেঁসে যাবেন আয়করের চক্করে৷ ব্যস৷ ফের ছুট নিজের পরিচয়পত্রের জেরক্স কপি আনতে৷
বৃহস্পতিবার দিনভর এই ধরনের বিভ্রান্তি, নানা গুজব-রটনা ও ঘটনার সাক্ষী রইল রাজ্য৷ আসলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঠিক কী নির্দেশিকা জারি করেছে তা নিয়েই যত কাণ্ড৷ কোথাও ব্যাঙ্ক কর্মীদের নিজস্ব সুবিধাজনক মনগড়া নিয়মের ফাঁদে কাঁদতে হল গ্রাহকদের৷ কোনও কোনও জায়গায় আবার স্রেফ অজ্ঞতার মাশুল দিতে হল দিনটা নষ্ট করে৷ এবং আজ শুক্রবার থেকে আরও এক বিভ্রাট অপেক্ষা করছে গ্রাহকদের জন্য৷ এটিএম খুললেও কতক্ষন সেখানে টাকা থাকবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে৷ সবচেয়ে বড় কথা, যাঁদের এটিএম কার্ড ব্লক রয়ে গিয়েছে তাঁদের চরম ভোগান্তির আশঙ্কা আছে৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, বিভিন্ন্ ব্যাঙ্ক কর্মীদের সংগঠন সূত্রে খবর, নোট লেনদেন ও জমার নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা আছে, নোটের নম্বর উল্লেখ করার দরকার নেই৷ যেহেতু কাজের চাপ বড্ড বেশি, গাদাগুচ্ছের টাকা জমা পড়ছে, আসল-নকল খতিয়ে দেখার সময় মিলছে না তাই বহু ব্যাঙ্ক কর্মী গ্রাহকের থেকে একটা সাদা কাগজে নোটের নম্বরগুলি লিখিয়ে সই করিয়ে নিচ্ছেন৷ এতে পরবর্তী সময়ে জাল নোট ধরা পড়লে ওই ব্যক্তিকে ডেকে পাঠানো যাবে৷ না হলে নিজের পকেট থেকেই গুনে দিতে হবে টাকা৷ নিজের আমানত থাকলে সেখানে যত খুশি টাকা জমা দেওয়া যাবে, স্রেফ গ্রাহকের সই মিলিয়ে সেটি নেবে ব্যাঙ্ক৷ আড়াই লাখ টাকার বেশি জমা দিলে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না দেখা হবে৷ অন্যের আমানতে জমা দিতে গেলে লাগবে পরিচয়পত্র৷ প্যান না থাকলে ৫০ হাজারের নিচে যে কোনও আমানত দিতে সমস্যা হবে না৷
তা-ই যদি হয় তো এত জটিলতার জালে কেন দিনভর ভোগান্তি হল গ্রাহকদের? সবার অভিযোগ, ব্যাঙ্ককর্মীরাই ডিপোজিট ফর্ম পাচার করছেন৷ পরিচিত, বন্ধু-বান্ধবকে, অথবা কখনও অর্থের বিনিময়ে তা দেওয়া হচ্ছে৷ এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দুই কর্মী সংগঠন বেফি এবং এআইবিইও জানিয়ে দিয়েছে, সাধারণ জমার ফর্ম ছাড়া বিশেষ কোনও ফর্ম তো লাগছে না৷ তাই এই অভিযোগ ভিত্তিহীন৷ কিন্তু এই যে হঠাত্ কয়েকগুণ ব্যাঙ্ক লেনদেন বেড়ে গেল এর হদিশ ঠিক কীভাবে পাবে আয়কর দফতর৷ সোজা অঙ্ক৷ বৃহস্পতিবার থেকে আমার আপনার জমা টাকার রোজকার হিসাব সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক পাঠিয়ে দেবে তাদের আঞ্চলিক কার্যালয়ে৷ পরে তা পৌঁছবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে৷ খতিয়ে দেখবে আয়কর দফতরের বিশেষ টিম৷ সেই মতো ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিস আসবে আপনার কাছে৷ উত্তরে সন্তুষ্ট হতে না পারলে জরিমানা৷ এবং জেলের ঘানিও টানতে হতে পারে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.