ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: দু’বছর আগের ভয়াবহ পরিস্থিতি ফিরে এল হাবড়ায়। এবার আরও বড় আকারে। গত পাঁচ মাসে হাবড়া এলাকায় প্রায় পাঁচশো জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী মৃত্যু হয়েছে চার জনের। জুলাই মাস শুরু হতেই, প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষা করে কমপক্ষে ৩০ জনের ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। কালঘাম ছুটে যাচ্ছে হাবড়া অশোকনগর এলাকার সরকারি হাসপাতালগুলির ডাক্তারদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে ২০১৭ সালকেও হার মানিয়ে দেবে ২০১৯।
[আরও পড়ুন: পরিবারকে সবরকম সহায়তার আশ্বাস, একুশীকে দেখতে হাসপাতালে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ]
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মার্চ মাস থেকে শুরু করে এখন অবধি, হাবড়া হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা হয়ে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে এমন রোগীর সংখ্যা প্রায় চারশোর বেশি। এছাড়া অশোকনগর, গাইঘাটা, গুমা-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতাল থেকে যে রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য হাবড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল, তাতে একশোর বেশি এনএস ওয়ান পজিটিভ এসেছে। হাবড়া হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, গত দু’মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সবথেকে বেশি।
এহেন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই পুরসভা, পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের ডেঙ্গু প্রতিরোধ অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এলাকাবাসীর দাবি, ২০১৮ সালে ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য ব্যাপক তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এবছর তেমন কিছু চোখেই পড়েনি। এবং তার জেরেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন৷ হাবড়া এলাকায় পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে উঠেছে যে তা সামাল দিতে অন্য হাসপাতাল থেকে চারজন ডাক্তার ও ৩০ জন নার্সিং স্টাফ সেখানে পাঠিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্যস্বাস্থ্য অধিকর্তা রাঘবেশ মজুমদার জানিয়েছেন, “হাবড়া হাসপাতালের উপর অধিকাংশ চাপ পড়ছে। তাই সেখানে লোকবল বাড়ানো হয়েছে।” কিন্তু শুধু চিকিৎসা তো সমাধান নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকলে এরপর হাসপাতালে রোগী ভরতির জায়গা থাকবে না। কিন্তু কী কারণে ওই এলাকায় ফের এভাবে থাবা বসাল ডেঙ্গু? এবিষয়ে জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তীর যুক্তি, “ডেঙ্গুর প্রকোপ চক্রাকারে বাড়ে। কোনও বছর বেশি হয়, কোনও বছর কম। এবারে বাড়ছে। কোনও গাফিলতি নেই। পরিস্থিতি যে রকম ছিল সেই অনুযায়ী কাজ হয়েছে।” তিনি আরও জানিয়েছে, “গত তিনদিন ধরে প্রচুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে। সমস্ত ড্রেন পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে। তার সঙ্গে লার্ভিসাইড দেওয়ার কাজ চলছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্ভেও করা হচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: উড়ো চিঠি পাঠিয়ে ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ ঠিকাদারদের]
হাবড়ার বিধায়ক তথ্য মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “হাবড়া পুর এলাকার ১৩ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা গিয়েছে। ওই এলাকার পাশ দিয়ে রেললাইন, রেল কর্তৃপক্ষ ড্রেন না পরিষ্কার করার কারণেই সেখানে এভাবে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে।” তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, গতবার যে তৎপরতা দেখা গিয়েছিল, এবার তার সিকিভাগও চোখে পড়েনি। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মত, নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই এবার ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্মসূচিতে ঘাটতি পড়ছে। কারণ যাই হোক, ডেঙ্গুর থাবায় কাঁপছে হাবড়া৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.