স্টাফ রিপোর্টার: বেতন, পেনশন নিয়ে চড়ছে টেনশন৷ শিলিগুড়ি থেকে সুন্দরবন, পুরুলিয়া থেকে মেদিনীপুর, সর্বত্র এক আলোচনা৷ মনের পাকদণ্ডী বেয়ে মোচড় দিচ্ছে দুশ্চিন্তা – বেতন বা পেনশনের পুরো টাকাটা তোলা যাবে তো?
শহরের অলি-গলি, চায়ের ঠেকেও উঠেছে তর্কের তুফান৷ যাঁরা এতদিন গলা ছেড়ে নোট-বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন তাঁদের মনেও সংশয়, মাস পয়লার টাকা তুলতে ভুগতে হবে না তো? বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে তো? না কি ২৪ হাজারেই থামতে হবে?
এটিএমে ভিড় কিছুটা কমলেও ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে এখনও লম্বা লাইন পড়ছে৷ বয়স্ক মানুষরা ব্যাঙ্কে গিয়ে নাকাল হচ্ছেন৷ ডাকঘরের লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ৷ গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো চেপে বসেছে বামেদের ডাকা বারো ঘণ্টার বন্ধ৷ যেমন, ঢাকুরিয়ার চন্দন সাহা রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন৷ কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রাক্তন চাকুরে জানালেন, “প্রতি মাসে ধীরে-সুস্থে, হেলতে-দুলতে ২৮ তারিখে পেনশন তুলতে যাই৷ বারবার ব্যাঙ্কে যাওয়া সমস্যা৷ তাই প্রায় পুরো টাকাটাই তুলে নিই৷ এবার কী হবে বুঝতে পারছি না৷ টেনশনে রয়েছি৷”
পাইকপাড়ার লক্ষ্মী দাসের অবশ্য অন্য টেনশন৷ জানালেন, “বনধ মানেই তো পেশির আস্ফালন৷ একদল বনধ সফল করতে লড়বে৷ অন্যদল চেষ্টা করবে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার৷ কোনও গন্ডগোল হবে না তো?” জনতার একটি বড় অংশ, যাঁরা নগদ লেনদেন ছাড়া অন্য কোনও পদ্ধতির লেনদেনে ধাতস্থ নন, তাঁরাও বেজায় চিন্তায় পড়েছেন৷ এতদিন নগদ জমা করা নিয়ে টেনশন ছিল৷ এবার নগদ তোলা নিয়ে৷ ব্যাঙ্কের কর্মচারীরাও টেনশনে রয়েছেন৷ তাঁদের আশঙ্কা, ২৮ তারিখ সোমবার হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে৷ শনি-রবি ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল৷ ফলে এমনতিই চাপ বেশি হওয়ার কথা৷ তার উপর পেনশন-বেতনের ডেট৷ পুরো বেতন বা পেনশন তুলতে পারলে গন্ডগোল যে হতেই পারে তা মেনে নিয়েছেন ব্যাঙ্ক ম্যানেজাররা৷ স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে সেইভাবে সতর্কও করা হয়েছে৷
রাজ্য সরকার অবশ্য জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি৷ কর্মচারীদের হাজিরা বাধ্যতামূলক করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে৷ কেউ কামাই করলেই ধরিয়ে দেওয়া হবে ‘শো-কজ’-এর চিঠি৷ ম্যাটারনিটি লিভ-সহ বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য ছাড় রয়েছে৷ বামেরা অবশ্য ব্যাঙ্ক-ডাকঘর-এটিএমকে বন্ধ-এর আওতার বাইরেই রেখেছেন৷ তবু টেনশন যাচ্ছে না৷ ভবানীপুরের বাসিন্দা প্রদীপ দত্ত জানালেন, “যেভাবে নিত্যনতুন ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার নিয়ম বদলাচ্ছে তাতে পেনশন নিয়ে টেনশন তৈরি হতে বাধ্য৷ তবে নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় সরকার ‘সিনিয়র সিটিজেন’-দের কথা ভেবে রেখেছে৷” সূত্রের খবর, মাস পয়লায় চাকরিজীবীদের বেতনে নোট বদলের কোনও প্রভাব যাতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে আরবিআই৷ বেতনের সময় সম্ভাব্য নগদ-সঙ্কট মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার দিল্লিতে টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন আরবিআইয়ের ডেপুটি গভর্নর এস এস মুন্দ্রা৷ কিন্তু টাকা তোলা নিয়ে সংশয় কাটেনি৷ যেমন পরিষ্কার হয়নি, ২৪ হাজার টাকার বেশি পেনশন অথবা বেতনভোগীরা তুলতে পারবেন কী না৷
সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে সাধারণত মাসের ২৭ তারিখ থেকে পরের মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়৷ এছাড়া এটি পেনশন তোলারও সময়৷ বেশিরভাগ পেনশনভোগীই একসঙ্গে পুরো টাকা অ্যাকাউণ্ট থেকে তুলে নিতে চান৷ অনেক অবসরপ্রাপ্ত ডাকঘরে মাসিক প্রকল্পে জমা টাকার সুদ তোলেন এই সময়েই৷ সে কারণেই, শীর্ষ ব্যাঙ্কের আশঙ্কা, এই সময়ে দুই সপ্তাহ টাকা তুলতে ব্যাঙ্কের শাখা ও এটিএম কিংবা ডাকঘরে গ্রাহকদের প্রবল ভিড় হবে৷ বিপুল নগদের চাহিদাও থাকবে৷
কোনও মাসের ১৫ তারিখে নগদ টাকার যে চাহিদা থাকে, ২৭ বা ২৮ তারিখে সেই চাহিদা ৬০-৭০ শতাংশ বেড়ে যায়৷ ২৯ থেকে পরের মাসের ৭ তারিখ সেই চাহিদাই দ্বিগুণ হয়ে যায়৷ এটাই আরবিআইয়ের হিসাব৷ বাড়তি নোটের জোগান দিয়ে এই চাহিদা কি পূরণ করতে পারবে আরবিআই? এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.