Advertisement
Advertisement
দেওয়াল লিখন, শিল্পী

শিল্পীদের ‘ডেট’ সমস্যা, দেওয়াল লিখতে অদক্ষ কর্মীরাই ভরসা রাজনৈতিক দলগুলির

ভোট উৎসবে পোয়াবারো অঙ্কন শিল্পীদের, পারিশ্রমিক গগণচুম্বী।

Demand of wall painter is becoming very high ahead the election
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 4, 2019 3:24 pm
  • Updated:April 4, 2019 3:24 pm  

টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া : মাথাপিছু দৈনিক হাজার থেকে বারোশো টাকা পারিশ্রমিক। সঙ্গে আরও বাড়তি শ’দুয়েক টাকা চা-টিফিন বাবদ। চলতি লোকসভা ভোটের মরসুমে একজন পেশাদার দেওয়াল লেখকের এটাই চালু ‘রেট’। লেখায় বিশেষ কিছু নজরকাড়া বাহানা থাকলে, এই রেট অবশ্য আরও চড়া। তবে এই টাকা দিলেই যে দেওয়াল লেখার লোক মিলবে, তা নিশ্চিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তাঁরা এখন প্রার্থীদের থেকেও বেশি ব্যস্ত। আজ বায়না করলে বা আগাম কথা বললে, তিনদিন পরে মিলছে দেওয়াল লেখার ‘ডেট’। ফলে দলীয় কর্মীদের কাজে লাগিয়ে চুন লেপে রাখা বহু দেওয়াল এখনও ফাঁকাই পড়ে আছে। এতেই উৎকন্ঠা বাড়ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের।

                                            [আরও পড়ুন : বিজেপির বুথ অফিস থেকে উদ্ধার ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ, চাঞ্চল্য শিলিগুড়িতে]

ভোটের দেওয়ালে দলীয় কর্মীরাই লিখবেন, বামপন্থী মহলে এটা ছিল চিরকালীন রেওয়াজ। একসময় ভোটের মরশুমে সবার আগে মাটির হাঁড়িতে গোলা লাল রঙ আর সরু তুলি হাতে দেওয়াল দখলে নামতেন বাম দলের নেতা-কর্মীরা। এঁদের মধ্যে অনেকেই পেশাগতভাবেও শিল্পী ছিলেন। এখনও সেই ধারা মেনেই ভোটের দেওয়াল লেখেন দলীয় কর্মীরাই। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়ে এবার ‘নিজের দেওয়াল নিজে লেখো’ মন্ত্রকে হাতিয়ার করে নামতে হচ্ছে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বিজেপিকেও। দলীয় কর্মীদের মধ্যে যাঁদের হাতে তুলিটা ভাল চলে, তাঁদের কদর বেড়েছে।বাঁকুড়া বিধানসভার অন্তর্গত পুরসভা এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দেখা গেল, প্রাক্তন শহর তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সিন্টু রজক ও তাঁর কয়েকজন অনুগামী এক দেওয়ালে জোড়া ফুল আঁকছেন৷ পেশাদার শিল্পীর মতো পোক্ত হাতে এক একটানে সাদা দেওয়ালে ফুটে উঠছে রঙিন ঘাসফুল। ভোটের মুখে আর সব কাজ ভুলে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের তুলি ধরতে হচ্ছে। কিন্তু কেন?
তাঁরা বলেন, একজন লেখকের জন্য দৈনিক প্রায় বারোশো টাকা খরচ করে ওয়ার্ডের সবক’টি দেওয়াল লিখিয়ে নিতে বিপুল টাকা দরকার। সেই খরচ করা সম্ভব নয়।

Advertisement

                                           [আরও পড়ুন : ভোট দেবেন কিনা ঠিক করেনি শহিদ বাবলু সাঁতরার পরিবার]

বাঁকুড়া লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার এবং বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে লড়ছেন সৌমিত্র খাঁ। তাঁদের কথায়,‘ আমাদের দলে বহু কর্মী আছেন যাঁরা পেশাগত জীবনে শিল্পী। তাঁরাই দেওয়াল লিখনের কাজটি করছেন।’ অবশ্য সবচেয়ে আগে প্রার্থীতালিকা প্রকাশিত হওয়ার সুবাদে জেলায় দেওয়াল দখলে বাকি দলগুলির চেয়ে ঢের এগিয়ে তৃণমূল। কিন্তু তাঁদের চিন্তা বাড়িয়েছে শিল্পীর অভাব। সেইসঙ্গে সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেওয়াল লিখনের কাজ চলছে ধীর গতিতে। চুন থেকে রঙের দাম, তুলি থেকে আঠা – সবকিছুরই অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন দলের কর্মী-সমর্থকরা জানান, পেশাদার শিল্পীরা সারাদিনে প্রমাণ সাইজের দেওয়ালগুলি লেখেন।
পেশাদার দেওয়াল লেখক প্রদীপ দাস বলেন, ‘যদি বড় দেওয়াল হয় আর সঙ্গে কার্টুন,ছড়াও থাকে, তাহলে অনেক সময় লাগে।’ গত কয়েক বছর ধরে বাঁকুড়া শহর ও আশেপাশের ব্লকগুলিতে ভোটের সময় সবকটি রাজনৈতিক দলের দখল করা দেওয়াল লিখতেন প্রসেনজিৎ পরামানিক। তিনি বলেন, ‘একটা সময় দেওয়াল লিখতাম পার্টি কর্মী হিসাবে। তখন পয়সার প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু ২০০০ সালের পর দিনে হাজার টাকা নিয়ে সব দলেরই দেওয়াল লিখি।’ বাঁকুড়ার প্রাক্তন সাংসদ সিপিএমের বাসুদেব আচারিয়ার কথায়, ‘আমি সাতের দশক থেকে ভোটে অংশগ্রহণ করছি। তখন ভুষোকালি আর লাল রঙ দিয়ে দেওয়াল লেখা হত। কখনও খবরের কাগজে আলতা দিয়ে লেখা হত। দলীয় কর্মীরা নিজের তাগিদ থেকেই দেওয়াল লিখতেন। এমন মুড়ি-মুড়কির মতো পয়সা উড়িয়ে দেওয়াল লিখনের কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না। এখন সবই বদলে গিয়েছে।’ বদলের বাজারে তাই পেশাদার দেওয়াল লিখন শিল্পীদের অভাব বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে৷

                                       [আরও পড়ুন : আরও দুই আবু হেনা-হুমায়ুন কবীর গোঁজ প্রার্থী, মুর্শিদাবাদে যেন ভ্রান্তিবিলাস]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement