নব্যেন্দু হাজরা: বারাসত থেকে যশোহর রোড ধরে আধ ঘণ্টা গেলেই দত্তপুকুরের চালতাবেড়িয়া। চোখে পড়বে, রাস্তার দুপাশে মৃৎশিল্পীদের কারখানা। চায়ের ভাঁড় থেকে শুরু করে মাটির নানা জিনিস সারা বছর তৈরি করেন তাঁরা। পুজোর মরশুমে মাটির প্রতিমা ও প্রদীপ গড়ার ব্যস্ততা থাকে। পোড়ামাটির ঘর সাজানোর নানা সরঞ্জাম এখান থেকে পাড়ি দেয় দেশে-বিদেশেও। তবে তীব্র দাবদাহের মধ্যে এখানে অন্য ব্যস্ততা। মাটির বাসন, বোতল, কুঁজো তৈরির। এখানকার তৈরি মাটির জিনিসই থরে থরে সাজিয়ে ভেন্ডররা নিয়ে চলে যান গোটা দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
গরম বাড়তে থাকায় বিগত কয়েকবছর ধরেই মাটির বোতলের চাহিদা বাড়ছিল। বোতলের গায়ে আবার বিভিন্ন নকশা করা। তবে বছর দুয়েক ধরে এখানে তৈরি মাটির থালা-গ্লাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে বলে জানালেন শিল্পীরা। শহরের হোটেল, রেস্তরাঁ থেকে বিয়েবাড়িতে মাটির থালা-গ্লাস এখন বেশ ‘ট্রেন্ডি’ বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। চাহিদাও বেশ ভালো। প্রায় হাজার সাতেক মানুষের জীবিকা এই গ্রামে। শিল্পীরা জানান, মূলত ক্যানিং থেকে মাটি নিয়ে গিয়েই থালা, বাসন, চায়ের ভাঁড় থেকে বোতল, কুঁজো বানানো হয়। তবে সবথেকে বেশি বানানো হয় দেবদেবীর মূর্তি। যা ভিনরাজ্য এমনকী বিদেশেও যায়।
রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দপ্তরও নানাভাবে এই শিল্পীদের সাহায্য করে। এখানে ক্লাস্টার তৈরি করে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে হাতে তৈরি জিনিস বিক্রিতে সহায়তা ব্যাঙ্কঋণ সবই দেওয়া হয়। এখানে আগে শুধু পাল-রা এই কাজ করলেও এখন অধিকাংশ পরিবারই মাটির কাজের সঙ্গে যুক্ত। এক শিল্পীর কথায়, বছর তিনেক ধরে মাটির বোতলের ব্যাপক চাহিদা। ৬০ থেকে ৯০ টাকা দরে এখান থেকে মাটির বোতল নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। শুনেছি শহরে দ্বিগুণ, তিনগুণ দামে তা বিক্রি হয়। ইদানীং মাটির থালা-গ্লাসেরও ভালো চাহিদা আছে। অনেকেই তা তৈরি করছেন।
জানা গিয়েছে, অরনামেন্টাল ভাঁড়েরও ব্যাপক চাহিদা। একপিস মাটির থালার দাম ১০ টাকা। গ্লাস দুটাকায় বিক্রি হয়। সরকারের তরফে অনেকসময়ই এখানকার শিল্পীদের স্কিল ডেভলমেন্টের কাজ করা হয়। দক্ষিণ কলকাতার এক নামকরা রেস্তরাঁ ব্যবসায়ীর কথায়, তাঁরা তাঁদের হোটেলে এখন মাটির থালায় কলাপাতা পেতে খাবার পরিবেশন করেন। তাছাড়া গ্লাসে জল এবং বাটিতে সবজি, মাছ ইত্যাদি দেওয়া হয়।
ওই ব্যবসায়ীর কথায়, এটা দেখতে যেমন ভালো লাগে তেমনই স্বাস্থ্যসম্মতও। খদ্দেররাও খুশি হন। বহু বিয়েবাড়িতেও এভাবেই খাবার পরিবেশন করা হয়। কথা হচ্ছিল দত্তপুকুরের শিল্পী অনুকূল মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি আবার এখানকার শিল্পীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেন সরকারের সঙ্গে কথা বলে। তিনি বলেন, ‘‘আমি ১৯৯৭ সাল থেকে এখানে আছি। এই পেশার প্রচুর মানুষ আসছে। মাটির বাসন থেকে দেবদেবীর মূর্তি সবই আমরা বানাই। তবে গরম পড়তে মাটির কুঁজো আর বোতলের ব্যাপক চাহিদা। চাহিদা বেড়েছে মাটির থালা, গ্লাসেরও। শহরের হোটেল-রেস্তরাঁ, বিয়েবাড়ির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.