তরুণকান্তি দাস: দেশজুড়ে পাঁচশো টাকার নোটের চরম আকাল৷ আর এই আকাল মেটাতে দিল্লির ভরসা পশ্চিমবঙ্গ৷ এবার পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির টাঁকশাল থেকেই ছাপা হবে পাঁচশোর নোট৷ প্রস্তুতি তুঙ্গে৷ তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, এখানে ছাপা সেই নোট মানুষের হাতে আসতে কমপক্ষে আরও দু’সপ্তাহ গড়াবে৷
দেশের চারটি টাঁকশাল নোটের জোগান দেয়৷ তার মধ্যে শালবনি ছাড়া মধ্যপ্রদেশের দেওয়াস, নাসিক, মহীশূর পাঁচশোর নোট ছাপছে৷ ছাপা চলছে দু’হাজারের নোটও৷ কিন্তু নোট বাতিলের পর যা পরিস্থিতি, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ভারতীয় অর্থনীতিতে মধ্যবর্তী নোট অর্থাৎ পাঁচশোর গুরুত্ব কতখানি৷ বিশেষ করে, যখন খুচরোর আকাল এবং প্রায় সকলে আতঙ্কিত হয়ে একশোর নোট জমিয়ে রাখছেন৷ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি তুলছেন এটিএম থেকে৷ ব্যাঙ্ক থেকেও কিন্তু নগদ তোলার সময় গ্রাহকদের দাবি সেই একশো৷ কারণ হাটে-বাজারে রোজকার জীবনযাত্রায় দু’হাজারের নোট তেমন কাজে আসছে না৷ বরং হ্যাপা বাড়িয়ে তুলেছে৷ এই অবস্থায় পাঁচশোর নোটের চাহিদা ঊধর্বমুখী৷ তার জোগান দিতে তাই কেন্দ্রকে বাড়তি গুরুত্ব দিতেই হচ্ছে৷ তারই প্রতিফলন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নয়া সিদ্ধান্তে৷
শালবনি থেকে পাঁচশোর নোটের জোগান দেওয়া৷ সেইমতো নকশা, কালি, ডাইস, কাগজ চলে এসেছে৷ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে কাজ শুরু করতে৷ বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের একটি সূত্র জানাচ্ছে, চলতি সপ্তাহেই পরিকাঠামো তৈরি হয়ে যাবে৷ তার পর ছাপা শুরু হবে৷ তবে তা গ্রাহকদের হাতে আসবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি৷
পাঁচশো টাকার কত নোট লাগে? দেশে চালু টাকার কত অংশ পাঁচশো? তার এই অভাব কেন? আসলে নোট বাতিল কাণ্ডের আগে থেকেই দু’হাজারের নোট ছাপা শুরু করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ অর্থমন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী ছিল প্রস্তুতি৷ তাই ভারতীয় অর্থ-বাজারের সদ্যোজাত বড় ভাই সবার হাতে ঘুরছে৷ কিন্তু পাঁচশো? জানা গিয়েছে, আট নভেম্বরের পর সেই নোট ছাপা শুরু হয় টাঁকশালগুলিতে৷ ফলে হঠাৎ ধাক্কা সামাল দেওয়া যায়নি৷ যাচ্ছে না৷ এখন হাল ফেরাতে পাঁচশো টাকার প্রায় এক হাজার ছয়শো কোটির নোট লাগবে৷ যখন নোট বাতিল ঘোষণা হয় তখন দেশে পাঁচশো এবং হাজার মিলিয়ে প্রায় ২২০৩ কোটি নোট ছিল বাজারে৷ এর মধ্যে পাঁচশোর সংখ্যা ছিল ১৫৭১ কোটি ও হাজার ছিল ৬৩৩ কোটি৷ যার কিছু ব্যাঙ্কে, কিছু আমজনতার হাতে ছিল৷ এগুলিকে সরিয়ে নতুন নোট বাজার দখল করবে, তেমনটাই হওয়ার কথা৷ তার মধ্যে হাজারের নোট এখন জাদুঘরে ঠাঁই নেওয়ার অপেক্ষায়৷ তার বদলে দু’হাজারের আমদানি৷ চারটি টাঁকশাল যদি তিন শিফটে টাকা ছাপে তো সারা বছরে ২৬০০ কোটি নোট ছাপতে পারে৷ এর মধ্যে দশ, বিশ থেকে দু’হাজার রয়েছে৷ এই মুহূর্তে বাজারে স্থিতিলতা আনতে ১৫৭১ কোটি সংখ্যক পাঁচশোর নোট প্রয়োজন৷ বেফির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বিশ্বাস বলেছেন, “জোগান নেই বলেই ব্যাঙ্কে রাত পর্যন্ত কাজ করেও গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না৷ মানুষ তা বুঝতে চাইছেন না৷ কোথাও ব্যাঙ্কে বিক্ষোভ হচ্ছে৷ কোথাও কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন৷ কিন্তু জোগান না থাকলে তো কিছু করার নেই৷ এখন যা অবস্থা, পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কয়েকমাস সময় লাগবে৷”
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখা গত ৯ নভেম্বর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জোগান দিয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা৷ বাংলার পাশাপাশি সিকিম ও আন্দামানেও জোগানের দায়িত্বে তারা৷ হিসাব বলছে, তার মধ্যে সামান্যই পাঁচশো টাকার নোট দিতে পেরেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ ফলে হাহাকার সর্বত্র৷ এই অবস্থায় শালবনি ভরসা৷ অপেক্ষা জঙ্গলমহলের এই টাঁকশাল কত দ্রুত বাঙালির হাতে তুলে দিতে পারে পাঁচশোর নোট৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.