সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: তৃণমূল জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর এক হুমকিতেই আতঙ্কিত প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরি নিজের ঘর সামলাতে এবার সিপিএমের হাত ধরলেন৷ মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সিপিএমের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন তিনি৷ কংগ্রেসের ভাঙন সামাল দিয়ে শক্তি পরীক্ষা দিতে বুধবার নিজের জেলায় ফের নতুন করে জোট রাজনীতি শুরু করলেন বহরমপুরের সাংসদ৷
কংগ্রেস ও বাম দলের সাংসদ, বিধায়ক এবং জেলা পরিষদ সদস্যদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন দু’দলের নেতারা৷ কিন্তু তাতেও যে আতঙ্ক কাটেনি তার প্রমাণ বৈঠক শেষে স্বয়ং অধীর চৌধুরি দল ভাঙানোর জন্য জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছেন৷ সিপিএম ও কংগ্রেস মিলিয়ে জেলা পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে বলে দাবি করলেও দু’দলের নেতারা হাজির হওয়া সদস্যদের যে সংখ্যা দিয়েছেন তাতে বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে৷ এছাড়াও বাম ও কংগ্রেসের তিন বিধায়ককে ডাকলেও বৈঠকে আসেননি৷ সিপিএম সাংসদ বদরুদ্দোজা খান বৈঠক শেষে দাবি করেন, “সিপিএমের ২০ এবং কংগ্রেসের ২৬ জেলা পরিষদ সদস্য বোর্ডকে সমর্থন করছেন৷” কিন্তু মিনিট কয়েক পরেই কংগ্রেসের তরফে জেলাপরিষদ সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার পাল্টা তথ্য দিয়ে দাবি করেন,“সভায় কংগ্রেসের ২৬ এবং সিপিএমের ১৫ জন জেলাপরিষদ সদস্য এসেছিলেন৷” এরপরই গুঞ্জন শুরু হয়, তা হলে বামেদের যে পাঁচজন সভায় এলেন না তারা কোথায় গেলেন? অধীরের ডাকা জোটের শক্তিপরীক্ষার সভায় না এসে ওই পাঁচজন কি তা হলে তৃণমূল শিবিরে চলে গিয়েছেন? যদিও তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে দাবি, “অধীর চৌধুরি যতই লম্ফঝম্প করুন না কেন শীঘ্রই মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে তৃণমূল এককভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে৷”
২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় আসলেও অধীর গড় বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদ জেলায় সেভাবে সাফল্য পায়নি তৃণমূল৷ গত পঞ্চায়েত ভোটেও কংগ্রেস শিবিরে দাঁত ফোটাতে পারেনি জোড়াফুল৷ কিন্তু এবার বিধানসভা ভোটে চার বিধায়ক জেতানোর পাশাপাশি দলের পক্ষে ৩২ শতাংশ ভোট এনে দিয়েছেন জেলায় নেত্রীর বিশ্বস্ত সেনাপতি পর্যবেক্ষক শুভেন্দু৷ এবার বিধানসভা ভোটের পর গত আড়াই মাসে জেলা পরিষদে তৃণমূলের সদস্যসংখ্যা বেড়ে একলাফে ১৩ থেকে ২৯-এ পৌঁছেছে৷ অঙ্কের হিসাবে ২৯ জন জেলা পরিষদ সদস্য নিয়ে মুর্শিদাবাদে তৃণমূল এখন এককভাবে বৃহত্তম দল৷ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে তৃণমূলের আর মাত্র ৭ জন জেলা পরিষদ সদস্য প্রয়োজন৷ তৃণমূল সূত্রে খবর, শীঘ্রই কংগ্রেস ও বাম দুই শিবির থেকেই আরও সাত-আট জন জেলা পরিষদ সদস্য শাসক দলে যোগ দেবেন৷ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা থাকায় ওই সদস্যরা তৃণমূলে যোগ দিতে কয়েকদিন সময় নিচ্ছেন৷ এবার যাঁরা তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন তাদের একটা বড় অংশই বামপন্থী বলে খবর৷ বস্তুত বিরোধী শিবিরে এই ধসের সংবাদ যে ১০০ শতাংশ সত্যি তা টের পেয়েই এদিন তড়িঘড়ি স্বয়ং অধীর চৌধুরি নিজের উদ্যোগে সিপিএমের সঙ্গে জোট বেঁধে সভা করলেন৷ সভায় অধীর ছাড়াও ছিলেন জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিত্ মুখোপাধ্যায়, মুর্শিদাবাদের সিপিএম সাংসদ বদরুদ্দোজা খান এবং জোটের ১৮ জন বিধায়কের মধ্যে ১৫ জন৷ ভগবানগোলার ও ডোমকলের দুই সিপিএম বিধায়ক মহসিন আলি ও আনিসুর রহমান এবং ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক সভায় আসেননি৷
এদিন বহরমপুরে রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সৌমিক হোসেন পাল্টা দাবি করেছেন,“যতজন সদস্য সঙ্গে আছে বলে কং-বাম নেতারা জোট বেঁধে দাবি করছেন তার চেয়ে অনেক কম ছিল৷ যে হলঘরে বৈঠক করেছেন জোট নেতারা সেখানে ২০০ সিট ছিল৷ সব তো ভর্তি ছিল৷ তা হলে কি ৭০ সদস্য বিশিষ্ট জেলা পরিষদে ওঁদের সমর্থক নির্বাচিত সদস্যসংখ্যা ২০০ হয়ে গেল? যতই মিথ্যা পরিসংখ্যান বলুক না কেন, শীঘ্রই জেলা পরিষদ মা-মাটি-মানুষের হাতে যাবে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.