সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: করোনায় বাধাপ্রাপ্ত ‘সাত পাকে বাঁধা’ও! মারণ রোগের সংক্রমণে পিছিয়ে যাচ্ছে শুভবিবাহ, উপনয়ন, অন্নপ্রাশন-সহ নানান সামাজিক অনুষ্ঠান। যেভাবে এই ভাইরাস দিন দিন থাবা বসাচ্ছে তাতে বিয়ে পাকা হয়ে গেলেও দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে পারছে না হবু বর-কনের পরিবার। করোনা কাঁটায় সামাজিক অনুষ্ঠান একপ্রকার থমকে গিয়েছে। ফলে বিপুল লোকসানের মুখে ডেকরেটার্স, কেটারার, বিউটি পার্লারের ব্যবসা। বিয়ের মরশুমে মোটা দক্ষিণা থেকে বঞ্চিত পুরোহিতরাও।
সেই ২৯ ফাল্গুন শেষ বিয়ের লগ্ন পার হয়ে গিয়েছে। চৈত্র মাসে সাধারণত বিয়ের তারিখ থাকে না। ফলে সাত পাকে বাঁধার দিনক্ষণ সব চূড়ান্ত হয় বৈশাখে। জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণে বিয়ের শুভ দিন থাকলেও বাড়ির বড় ছেলে বা মেয়ের বিয়ে জ্যৈষ্ঠ মাসে হয় না। আবার আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা বর্ষায় বিয়ের আয়োজন করতে পিছিয়েও যান অনেকে। সবমিলিয়ে, এই মরশুমের মধ্যে বৈশাখই বিয়ের আদর্শ সময়। তাই বৈশাখকেই বেছে নিয়েছিলেন পুরুলিয়ার আড়শা সিরকাবাদ গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক দত্ত, নিজের বড় মেয়ের বিয়ের দিন স্থির করতে। বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ২০ বৈশাখ। সেইমত ছাপতে দেওয়া হয় কার্ড। কিন্তু করোনার কোপে কার্ড ছাপানো বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিয়ের অনুষ্ঠানও বাতিল করতে হয় তাঁকে।
একইভাবে আগামী ২১ বৈশাখ বড় মেয়ের বিয়ের দিন চূড়ান্ত করেছিলেন শহর পুরুলিয়ার নেতাজি আবাসনের বাসিন্দা তথা বিউটিশিয়ান অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাঁরা বিয়ে পিছিয়ে দেন বলে জানান। তাঁর কথায়, “এখন আনন্দ করার সময় নয়। তাছাড়া আমার বহু আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব অস্ট্রেলিয়া, লন্ডনে রয়েছেন। অস্ট্রেলিয়াতে টানা ছ’মাস লকডাউন। তাই আপাতত মেয়ের বিয়ে স্হগিত।” এ তো গেল বিয়ে বাতিলের কথা। শুভ অনুষ্ঠান তো আরও আছে। যার উপরেও পড়েছে করোনার কোপ। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নাতনির অন্নপ্রাশনের দিন ঠিক করেছিলেন ১৪ বৈশাখ। সেইমতো মহাভোজের আয়োজন করে অতিথি আপ্যায়ণের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু লকডাউনের সময়সীমা বেড়ে যাওয়ায় সেই পরিকল্পনা থেকে তিনি সরে এসেছেন। তাঁর কথায়, “নাতনির অন্নপ্রাশন হবে। কিন্তু সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ের কথা মাথায় রেখে ভোজের অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছি।”
একইভাবে এই সব সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় দু’মাস আগে থেকে নেওয়া বায়নাও এখন ফেরত দিতে হচ্ছে ডেকরেটার্স ও কেটারারদের। আড়শার জুরাডি গ্রামের ডেকরেটিং ব্যবসার কাজে যুক্ত সুনীল গোপ বলছেন, “কতজনের অগ্রিম যে ফেরত দিলাম কে জানে! ব্যবসা একেবারে লাটে উঠেছে।” ফেরত দিতে হচ্ছে তত্ত্ব থেকে কনে সাজানোর অগ্রিম টাকাও। ঝালদা পুর শহরের পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী বলেন, “কতজনের বিয়ের দিন পাকা হয় আমার হাতে দেখা পাঁজিতে। এখন সেসব বিয়ে বাতিলের খাতায়।” এসবই যে করোনা সংক্রমণ আর লকডাউনের পরোক্ষ প্রভাব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.