তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে লাগাতার ছাত্র আন্দোলনের জেরে নতিস্বীকার। পদত্যাগ করলেন ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত এবং
অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিন সুদীপ্ত শীল। প্রায় ঘণ্টাছয়েক পড়ুয়াদের আন্দোলন-বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করেন তাঁরা।
দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পড়ুয়া চিকিৎসকদের ওপর অমানবিক অত্যাচার, টিএমসিপি ইউনিটের নামে হুমকি ও তোলাবাজির অভিযোগে সরব হলেন চিকিৎসক-পড়ুয়ারা। ঘটনাকে ঘিরে বুধবার ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। টিমসিপির একদল ছাত্রনেতা দিনের পর দিন কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই ফেল করানোর ভয় দেখাত বলে অভিযোগ। মেধাবী পড়ুয়ারা ভালো পরীক্ষা দিলেও টিএমসিপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত আরজি কর কাণ্ডে চর্চায় আসা চিকিৎসক অভীক দে’কে ও তার দলবলের অঙ্গুলিহেলনে ও অধ্যক্ষ, ডিন ও কিছু চিকিৎসকদের সাহায্যে তাঁদের ক্ষেত্রে নম্বর কেটে দেওয়া হতো বলে অভিযোগ।
চিকিৎসক-পড়ুয়াদের দাবি, অবিলম্বে টিএমসিপি ইউনিট ভেঙে দিতে হবে। বর্তমানে ওই টিএমসিপি ইউনিটের শাহিন সরকার এবং ইউনিট সভাপতি সোহম মণ্ডল নামে দুজন হাউস স্টাফ রয়েছেন যাঁরা টিএমসিপি ইউনিটের নামে মেডিকেলে দাদাগিরি চালান, তাঁদের দ্রুত বহিষ্কার করতে হবে বলেও দাবি উঠেছে। এমনকি ওই দু’জনের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মানসিক বা শারীরিকভাবে নির্যাওতন করানো হতো বলে অভিযোগ। এমনকি এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসক পড়ুয়ারা।
এদিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে যোগ দিতে যান চেয়ারম্যান তথা শহিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। এদিন পড়ুয়ারা গৌতমবাবুর সামনেই অধ্যক্ষের কাছে তাঁদের অভিযোগ জানাতে শুরু করেন পড়ুয়া চিকিৎসকেরা। প্রায় দেড়ঘন্টা ধরে তাঁদের অভিযোগ শোনেন শিলিগুড়ির মেয়র। অভীক দে ও তার দলবলের কীর্তিকলাপ শোনার পর অধ্যক্ষকে সমস্ত বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাতেও নির্দেশ দেন তিনি। এমনকি, কীর্তিমান অভীক দে কে ‘হরিদাস পাল’ বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। তিনি বলেন, “পড়ুয়ারা আমার কাছে একাধিক পড়ুয়ারা তাঁদের দাবি জানিয়েছেন। আমি শুনেছি তাঁদের কথা। অধ্যক্ষকে বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলেছি।”
শিলিগুড়ির মেয়র বেরিয়ে যেতেই অধ্যক্ষের ঘরে ডিন সন্দীপ সেনগুপ্তকে নিয়ে যান পড়ুয়ারা। পড়ুয়ারা তার পদত্যাগের দাবি জানাতে থাকেন। পড়ুয়ারা অধ্যক্ষ ও ডিনের সামনেই বারবার অভিযোগ করেন যে এই কলেজেরই পড়ুয়াদের কেউ কেউ দেখে নেওয়ার হুমকি, এমনকি প্রাণে মারার হুমকিও দিচ্ছেন। কলেজের এক অধ্যাপক চিকিৎসকও এই ‘থ্রেট কালচার’ গ্রুপে যুক্ত রয়েছেন। অবিলম্বে কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি তোলা হয়েছে। পাশাপাশি, অভীক দেকে এই কলেজে ঢোকা নিষিদ্ধ করার দাবিও তোলা হয়। পড়ুয়াদের দাবিদাওয়া মেনে সমস্ত অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে বলে দাবি করেন অধ্যক্ষ। তবে রাতে পদত্যাগ করেন ডিন এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিন। অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, “আমরা পড়ুয়াদের সমস্ত অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দেব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.