শোকার্ত পরিবার। নিজস্ব ছবি।
বাবুল হক, মালদহ: ‘তুকতাক’ করার অভিযোগ। আর সেই অভিযোগে এক বৃদ্ধকে গণপিটুনির অভিযোগ উঠল গ্রামবাসীদের একাংশের বিরুদ্ধে। আর এই ঘটনার তিনদিন পর আমবাগানে মিলল ওই বৃদ্ধের ঝুলন্ত দেহ। তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মালদহের (Maldah) চাঁচোল থানার ভগবানপুর এলাকায়। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে চাঁচোল থানায় বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম জয়দেব বর্মন, বয়স ৬০ বছর।
জানা যাচ্ছে, শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে সামান্য দূরে আমবাগানে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় (Hanging deadbody) তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। খুন না কি আত্মহত্যা, তা জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। মৃতের মেয়ে পূরবী বর্মন জানিয়েছেন, গ্রামে কারও অসুখ হলেই দায়ী করা হত তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে। গ্রামবাসীদের একাংশের সন্দেহ ছিল, তাঁর বাবা নাকি তন্ত্রসাধনা করেন। সে জন্যই গ্রামে অসুখ-বিসুখ হচ্ছে। সেই সন্দেহের বশে একাধিকবার বৃদ্ধকে হেনস্থা করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার এলাকার কয়েকজন মাতব্বর সালিশি সভা করে মলমূত্র খাইয়ে জয়দেব বর্মনকে মারধর করে। পূরবীর দাবি, এর পরই বৃদ্ধ বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। শুক্রবার সাতসকালে বাড়ি থেকে সামান্য দূরে আমগাছে জয়দেব বর্মনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতের ভাইপো বিশ্বজিৎ বর্মন বলেন, “আমার কাকু সাধারণ মানুষের সেবা করতেন। কিন্তু কাকুকে সবসময় তুকতাক করে বলে সন্দেহের চোখে দেখা হত। কাকুর জন্য নাকি গ্রামে অসুখ-বিসুখ ছড়ায়! গত মঙ্গলবার গ্রামের এক যুবতী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন তার পরিবারের লোকেরা আমার কাকুর কাছে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। সেই সময় নাকি ওই যুবতী বোবা হয়ে যায়। এরপরই তুকতাক করার অভিযোগ তুলেই কাকুকে টেনে হিঁচড়ে গ্রামের সালিশি সভায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মারধর করার পাশাপাশি মলমূত্র খাওয়ানো হয়। এই অপমান সহ্য করতে পারেননি আমার কাকু।” পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজন গ্রামবাসীকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.