পলাশ পাত্র, তেহট্ট: কালীপুজোয় আসার কথা ছিল। তার আগেই তিনি ফিরছেন। তবে কফিনবন্দি হয়ে। কাশ্মীরে মৃত নদিয়ার পলাশিপাড়ার জওয়ান পরিতোষ মণ্ডলের শুক্রবার ভোররাতের মধ্যেই পলাশিপাড়ার রুদ্রনগরের বাড়িতে চলে আসবে। তবে তার আগে তাঁর বাড়িতে গিয়ে শোকার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও পলাশিপাড়ার বিধায়ক তাপস সাহা।
স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে ওষুধ খাওয়ানো ও চিকিৎসকের নির্দেশে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। মেয়ে প্রিয়া মায়ের তদারকি করছেন। বাড়ি ভরতি আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের ভিড় রয়েছে। এরই মাঝে বিএসএফ জওয়ান পরিতোষের ছেলে প্রীতম কেঁদে আক্ষেপ করে চলেছে, ‘বাবা আসার জন্য প্লেনের টিকিট দেখতে বলল। তারপর থেকে ফোনে আর পেলাম না…।’
গত মঙ্গলবার সকালে পরিতোষবাবুর কর্মস্থল থেকে রুদ্রনগরের বাড়িতে ফোন করে জানানো হয় তাঁর মৃত্যুর খবর। পাকিস্তান সীমান্তের ভেতর একটি নালা থেকে এই জওয়ানের মৃতদেহ উদ্ধার করে পাকিস্তানিরা। শনিবার বৃষ্টির মধ্যেই ভারত পাকিস্তান সীমান্তে একটি নালার পাশে ডিউটি করছিলেন পরিতোষ। আচমকা বৃষ্টির জলে ভয়ানক হওয়া নালায় হড়পা বানে তিনি তলিয়ে যান। পরে সেই দেহ ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তার আগে গত শনিবার বেলার দিকে প্রীতমের সঙ্গে ফোনে কথা হয় পরিতোষবাবুর। কান্নাভেজা গলায় প্রীতম জানাল, ‘বাবা ২৬ অক্টোবর চলে আসার জন্য আমাকে জম্মু-দমদম প্লেনের টিকিট নিয়ে দেখতে বলে। সেইমতো আমি এক ঘন্টার মধ্যে সমস্ত কিছু দেখে নি। এরপর যতবার ফোন করেছি, পাইনি।’
জম্মু-কাশ্মীরের আরনিয়া সেক্টরের ৩৬ নম্বরের ব্যাটেলিয়ান পরিতোষ মণ্ডল যখনই সময় পেতেন, বাড়িতে ফোন করতেন। ছেলের সঙ্গে কথা হলেই ভাল করে পড়াশোনা করছে কিনা, খাওয়া, শরীর নিয়ে খোঁজ নিতেন এই জওয়ান। শনিবারও সেসব খোঁজ নেওয়ার পর একেবারে দেশের বাড়ি রুদ্রনগরে চলে আসার বিষয়টি জানায়।
১৯৮৫ সালে সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন নদিয়ার এই সন্তান। ২০২২ সালে তাঁর অবসর নেওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই বছর আটান্নর এই জওয়ান চলে আসার জন্য একমাসের ছুটি নিয়ে সমস্ত প্রস্তুতি সারতে চেয়েছিলেন। কালীপুজোর আগে এসেই পুজো দেখা থেকে কাগজপত্র গোছানো করতে চেয়েছিলেন তিনি। বাবার সঙ্গে আর কথা হল না বলতে বলতে থম মেরে যায় প্রীতম।
খবর পেয়ে বনগাঁ থেকে বিবাহিত মেয়ে প্রিয়া বাড়িতে চলে আসে। আসে অন্যান্য আত্মীয়াস্বজনরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিয়ালদহে পৌঁছায় পরিতোষ মণ্ডলের দেহ। সেখান থেকে প্রায় দেড়শো কিমি রাস্তা পেরিয়ে রুদ্রনগরের বাড়িতে দেহ পৌঁছতে শুক্রবার ভোররাত হয়ে যাবে বলে জানাচ্ছে তাঁর পরিবার। বুধবার জওয়ানের স্ত্রী ও ছেলে প্রীতমের সঙ্গে কথা বলতে ও সমবেদনা জানাতে তাদের বাড়ি যান সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও বিধায়ক তাপস সাহা। বিধায়ক বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দু:খজনক ঘটনা। তাঁদের সমস্যা হলে আমরা অবশ্যই পাশে থাকব।’ ঘরের ছেলে, সাহসী যোদ্ধা পরিতোষের মৃত্যুশোকে আপাতত পুজোর রেশ ম্লান হয়ে গিয়েছে গোটা রুদ্রনগরেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.