স্টাফ রিপোর্টার: চারদিকে ডুকরে ওঠা কান্নার রোল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রজনীগন্ধার পাপড়ি। চুল্লিতে ঢুকতে আর মিনিট তিনেক বাকি ছিল। তার মধ্যেই হাত নড়ে উঠল মৃত শিবানী বিশ্বাসের (৫৫)। “বেঁচে আছে রে!” তারস্বরে চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে শোরগোল পড়ে গেল। শুক্রবার বিকেলে মড়া বেঁচে ওঠার গুজবে হইচই পড়ে যায় রতনবাবু শ্মশানঘাটে। ঘটনাস্থলেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিবানী বিশ্বাসের আত্মীয়রা। মৃতদেহ নিয়েই ফের অন্য হাসপাতালে দৌড়ে যান তাঁরা। যদিও মধ্যমগ্রাম মাতৃসদনে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা ওই মহিলাকে মৃত বলেই ঘোষণা করেন। পরিবারের দাবি, শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার সময় বেঁচে ছিলেন শিবানীদেবী। তাঁর শরীরও উষ্ণ ছিল।
গত ১০ জুন রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শিবানীদেবী। তাঁকে বারাসত হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ১১ জুন আরজিকরে স্থানান্তরিত করা হয়। শুক্রবার সকাল ৭টা ১৫ নাগাদ মারা যান শিবানীদেবী।
[ ভুল ইঞ্জেকশনের ফলে কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগ, উত্তেজনা বর্ধমান মেডিক্যালে ]
পরিবারের লোক মৃতদেহ নিয়ে প্রথমে মধ্যমগ্রামের বঙ্কিম পল্লিতে তাঁর বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় দমদমের রতনবাবু শ্মশানঘাটে। সেখানে জটলা করেছিলেন মৃতের পরিবারের আত্মীয়রা।
চুল্লিতে ঢোকানোর আগে আচমকাই চিৎকার করে ওঠেন শিবানীদেবীর মেয়ে। “মা আমার হাত চেপে ধরেছে।” মুহূর্তে শোরগোল পড়ে যায়। বুকে কান পেতে অনেকেই দাবি করেন, “হৃদস্পন্দন শোনা যাচ্ছে।” কেউ গায়ে হাত দিয়ে জানান, “এইতো দিব্যি গরম রয়েছে শরীর।” যদিও এই ঘটনাকে গা-সওয়া বলছেন চিকিৎসকরা। আরজিকরের প্রিন্সিপাল ডা. শুদ্ধোদন বটব্যাল জানিয়েছেন, মারা যাওয়ার পরেও অনেক সময় কোনও অঙ্গ নড়ে ওঠে, অথবা শরীর অতটা শীতল হয় না। অনেকেই এই ঘটনায় ভাবেন, মৃত ব্যক্তি বুঝি বেঁচে আছে। ডা. বটব্যালের কথায়, “চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমনও হতে পারে যে মারা যাওয়ার পর মৃতের শরীর আগের চেয়েও বেশি গরম হয়ে গিয়েছে।”
[ ছ’বছরের শিশুকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ, গ্রেপ্তার বৃদ্ধ ]
যদিও এমন যুক্তি মানতে নারাজ শিবানী দেবীর পরিবারের লোকেরা। তাঁরা মৃতদেহ নিয়ে ফের আরজিকরে আসেন। সেখানে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। কিন্তু চিকিৎসকরা অনড় ছিলেন। তাঁরা বারবারই বলেন, মারা গিয়েছেন শিবানী বিশ্বাস। ফের অ্যাম্বুল্যান্স করে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মধ্যমগ্রাম মাতৃসদনে। সেখানে চিকিৎসকরা শিবানীদেবীর শরীর পরীক্ষা করে বলেন, মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মৃতার ভাগনে দিবাকর নন্দীর দাবি, “শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার সময় মামি বেঁচে ছিলেন। আরজিকরের চিকিৎসকরা ভাল করে না দেখেই ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিয়েছেন। এতদূর অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে আসার পথেই মারা গিয়েছেন মামি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.