অভিষেক চৌধুরী, কালনা: মৃত ব্যক্তিদের নামে সরকারি প্রকল্পের ঘরের অনুমোদন! আর তা আসতেই সেই টাকা রাতারাতি তুলে নেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। কালনার এক পঞ্চায়েতে এমনই এক ঘটনাকে ‘ভূতুড়ে কাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। এর মাঝেই তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতির স্ত্রীর নামে ‘বাংলা আবাস যোজনা’য় টাকা পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
এইসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কালনা-১ (Kalna) ব্লকের বিডিওর কাছে এলাকার মানুষজন দ্বারস্থ হয়ে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। বিডিও সেবন্তী বিশ্বাস বলেন, “বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পের বেনিফিশিয়ারির পরিবারের লোকজন অভিযোগে জানান,তাঁরা সেই ঘর পাননি।ও ই ঘর অন্য কেউ পেয়েছেন।আজ তিন-চারটি অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখছি। আমাদের একটি তদন্তকারী দল তদন্ত শুরু করেছেন। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি সত্যিটা সামনে চলে আসবে।”
প্রসঙ্গত, কালনা-১ ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে চারদিন আগে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ প্রকল্পে কয়েকজন ব্যক্তির নামে অনুমোদন হওয়া ঘর অন্য ব্যক্তিদের পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে এলাকায় শোরগোল পড়ে গেলেও এই বিষয়ে প্রধানের কোনও সদুত্তর মেলেনি। এরপরেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁরা বিডিওকে লিখিত অভিযোগ করেন। সোমবারও ওই একই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের ঘর নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হন এলাকার বাসিন্দারা। এদিন কালনা ১ ব্লকের বিডিওকে তাঁরা লিখিত অভিযোগে জানান,তাঁদের পরিবারের মৃত সদস্যদের নামে বাংলা আবাস যোজনার টাকা অনুমোদন হয়ে এলেও সেই টাকা অন্য কেউ তুলে নিয়েছেন।
কুতিরডাঙার বাসিন্দা শিখা মধু বলেন,“আমার বাবা মহাদেব মধু ২০১৭ সালে মারা যান। বাবার নামে ঘর এলেও সেই টাকা অন্যজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়েছে। চরম দুর্নীতি হয়েছে।” দুপসা গ্রামের বাসিন্দা ভ্যাবন মোল্লা বলেন,“মা নূরনাহার বিবি ২০১৪ সালে মারা গিয়েছেন। তারপর মায়ের নামে ঘর এসেছিল। আমরা তা পাইনি। অন্যজন সেই টাকা তুলে নিয়েছে। আমরা এই দুর্নীতির বিচার চাই।”
একই ধরনের অভিযোগ করেছেন কুতিরডাঙার সুশীলা বিশ্বাসও। অন্যদিকে ওই পঞ্চায়েতের আসাননগর এলাকার মানুষজন জোটবদ্ধ হয়ে আরও একটি লিখিত অভিযোগ জানান বিডিওকে। অভিযোগে উল্লেখ করেন,“তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি কিশোর বন্দ্যোপাধ্যায়ের দোতলা বাড়ি থাকা সত্বেও নিজের স্ত্রীর নামে বাংলা আবাস যোজনার ঘর নিয়েছেন। উনি পিএইচই জল প্রকল্পে চাকুরিও করেন। এছাড়া তিনি বাড়িতে আরও চাকুরি নিয়েছেন।”
সরকারি প্রকল্পের ঘর নেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন কিশোর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন,“সরকারি প্রকল্পের ঘর পেয়েছি। আমার নিজস্ব জমি, ভিটে নেই। আমি চুক্তিভিত্তিক একটি কাজ করি। দোতলা বাড়িটিও আমার নিজের নয়। মায়ের জায়গার উপর দাদা বাড়িটি করেছে। আমি ভুল কিছু করিনি।” যদিও এদিনের সব অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানায় ব্লক প্রশাসন। এদিকে এদিনও ফোনে পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রধানকে। উপপ্রধান লিয়াকত শেখ জানান, বাংলা আবাস যোজনার এই দুর্নীতি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.