সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার প্রায় তিন মাস পরে ঘরে ফিরল মেয়ে। এমনই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল নদীয়ার তেহট্ট থানার নিশ্চিন্তপুর হালদারপাড়া গ্রামে।
গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জানা যায়, কুশ হালদার নিতান্তই গরিব। প্রায় ৩০ বছর আগে স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। সেই থেকেই দীর্ঘকাল একাই থাকতেন। যৎসামান্য মাছের ব্যবসার আয়ে নিজেই রান্না করে খেতেন। বাসস্থান বলতে বাঁশ বাগানের নিচে সামান্য একটি কাঁচা ঘর। সারাদিন কাজের শেষে এই ঘরই ছিল তাঁর ঠিকানা। কয়েক মাস আগে হঠাৎ গ্রামবাসীরা লক্ষ করেন দশ বছরের কন্যা সন্তান-সহ কাকলি নামে এক মহিলাকে বিয়ে করে ঘরে তুলেছেন তিনি। কুশবাবুর অবস্থার কথা বিবেচনা করে গ্রামের মানুষ এই বিয়েকে সমর্থন করেছিল। হঠাৎ গত আশ্বিন মাসে মহালয়ার ঠিক দু’দিন পরে কাকলিদেবী ভোরবেলায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সন্ধ্যায় ফিরে জানান, তাঁদের মেয়ে প্রিয়া হালদার (পিউ) পলাশী এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। সেই মৃতদেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে তিনি ফিরে এসেছেন।
তাঁর কথায় গ্রামের সকলে বিশ্বাস করে নেয়। মেয়ের অপঘাতে মৃত্যু হওয়ার ফলে কুশবাবু চারদিনের মাথায় গ্রামের মানুষের সাহায্যে নাপিত পুরোহিত ডেকে পিণ্ড দানের মাধ্যমে পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পূর্ণ করেন। পাড়ার কয়েকজনকে ডেকে সাধ্য মত খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করেন। পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হলেও গ্রামবাসীদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধছিল। কারণ ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেলে সেই ঘটনা পুলিশ জানবে না, তা কি করে হয়? আবার মেয়ের মা যখন বলছে, তখন তারা অবিশ্বাসও করতে পারেনি। কিন্তু থানাতে অভিযোগ হল না, ময়নাতদন্ত হবে না, তা কখনও হয়? নিজে নিজেই সেই দেহ তুলে নিয়ে গিয়ে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেবে এই গল্প মেনে নিতে পারেনি গ্রামবাসীরা। ইদানিং ওই মহিলার চালচলনেও সন্দেহ হয় গ্রামবাসীদের। অবশেষে সকলেরই ভুল ভাঙল মঙ্গলবার। ওই দিন বিকেলে হঠাৎ বাড়িতে ফিরে আসে দশ বছরের প্রিয়া। জানায়, বহরমপুর দিদার বাড়ি চলে গিয়েছিল সে। কারণ মা তার ওপরে খুব অত্যাচার করত। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে না খেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সে এও জানায় দিদার বাড়ি থেকে বহরমপুর একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভরতি হয়েছে এবং পড়াশোনা করছে।
এদিকে মেয়েটির মা কাকলি হালদার বলেন, মহালয়ার তিনদিন পরে গাড়ি চালকের কাছে খবর পান মেয়ে পলাশী স্টেশন এর আশেপাশে কোথাও ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গিয়েছে। এই খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়েকে শনাক্ত করেন তিনি। পুলিশি তদন্ত এবং ময়নাতদন্ত হয়েছে কিনা সে প্রশ্ন করাতে সম্পূর্ণ বিষয়টি এড়িয়ে যান। কুশ হালদার বলেন, এলাকারই এক সাধুর মাধ্যমে ট্রেনে ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ানো কাকলির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। সঙ্গে থাকা মেয়েটিকেও তিনি মেনে নিই। মহালয়ার তিনদিন পরে কাকলি সাদা থান পরে বাড়িতে ফিরে জানান, মেয়ে ট্রেনে কাটা পড়েছে। কুশ হালদারের নিকট আত্মীয় দেবকুমার হালদার বলেন, যেহেতু শাস্ত্রমতে মেয়েটির পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সেই দিক বিচার করে মেয়েটিকে আর ঘরে ফিরিয়ে নেওয়া কোন মতেই সম্ভব নয়। তাঁরা চান, ওই মহিলা যেন মেয়েকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যান।
মেয়েটিও কোন এক অজানা কারণে বাড়িতে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে। সে গ্রামে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং তাকে দেখতে কৌতূহলী মানুষ ভিড় করছে। সে জানায় সে তার মায়ের কাছে আর যাবে না। সে এখন ওর মামার বাড়ি যাবে ও বহরমপুর দিদার বাড়িতে থাকে পড়াশোনা করবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.