Advertisement
Advertisement
খাগড়াগড়ের মহিলা জঙ্গি

খাগড়াগড় মামলায় কারাদণ্ড গুলশনারার, সাজা শুনে চোখে জল মায়ের

না জেনেই মেয়েকে জেএমবি জঙ্গির সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিল পরিবার।

Daughter punished with linked to Khargragar blast,mother feels sad
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 31, 2019 7:42 pm
  • Updated:August 31, 2019 8:44 pm  

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: না জেনেই এক জঙ্গির সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ছ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্তি। তবুও তো সে সন্তান। তাই মা জাহিমা বিবির মনখারাপ। চোখের জল যেন বাঁধ মানছে না খাগড়াগড় বিস্ফোরণে সাজাপ্রাপ্ত গুলশনরা বিবির মায়ের। বলছেন, ‘আমি তো মা। গুলশনরা ছোট থেকেই ভাল। গ্রামের মানুষও জানেন। শাকিলটার জন্যই সব হয়ে গেল!’ নদিয়ার করিমপুরের বারবাকপুর পুটিমারির রাজিয়া যে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মতো এত বড় অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকতে পারে, গ্রামের মানুষ আজও বিশ্বাস করতে পারেন না।

[আরও পড়ুন: স্ত্রীর অধিকার চেয়ে শ্বশুরবাড়ির সামনে সন্তান-সহ ধরনায় যুবতী]

২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণে রাজিয়া বিবি ওরফে গুলশনারার স্বামী শাকিল গাজি-সহ দুজনের মৃত্যু হয়। সেসময় বিস্ফোরণস্থলে পুলিশ পৌঁছালে, মেঝেতে পড়ে থাকা রক্ত মুছে পুলিশের দিকে বন্দুক তাক করেছিল রাজিয়া ওরফে গুলশনারা। সেই বন্ধুকধারী রাজিয়াকে গ্রামের মানুষ চেনেন না। গ্রামের ছোটরা বলছিল, ‘ঈদ এলে ভ্যালভ্যালে (গ্রামে তাকে এই নামে ডাকত)আমাদের হাতে মেহেন্দি করে দিত। উৎসব এলেই ও আমাদের ডাকত। ও খুব ভাল।’ আর বড়দের কথায়, ‘ও গ্রামের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। শান্ত স্বভাবের মেয়ে। মাথা নিচু করে সকলের সঙ্গে কথা বলত। কোনওদিন খারাপ কিছু দেখিনি। তবে ২০০৬-২০০৭ সালের পর থেকে ওকে আমরা সেভাবে দেখতে পাইনি।’
২০০৭ সালে বাংলাদেশের জেএমবি সদস্য শাকিল গাজির সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় রাজিয়ার। এর এক বছর আগে থেকে এই গ্রামে যাতায়াত করত শাকিল। টুপি, চাদর, বোরখা বিক্রি করত সাইকেল চেপে। শাকিলের উদ্দেশ্য ছিল, নদিয়ার এই অঞ্চলে জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলা, নাশকতা করা। কিন্তু তার এই উদ্দেশ্যে বোঝার আগেই রাজিয়ার জ্যাঠতুতো দাদা রফিকুল গাজি, রাজিয়ার বাবা আজিজুল গাজির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। রাজিয়াদের বাড়ির পাশেই একটি মাদ্রাসা ও মসজিদ রয়েছে। মাদ্রাসার দায়িত্বে থাকা রফিকুলের মাধ্যমে শাকিল নমাজ পড়তে যেত। ধীরে ধীরে রাজিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য আজিজুল গাজিকে শাকিল প্রস্তাব দেয়। রাজিয়ার গায়ের রঙ কালো, একটু বোকা। তাই মেয়ের বিয়ে নিয়ে ছিল চিন্তিত ছিল গাজি পরিবার। তাই প্রস্তাবে সায় দেওয়া হয়। দুজনের বিয়ের পর কয়েকদিন এই দম্পতি বারবাকপুরেই ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই সময় রাজিয়াদের বাড়ির পাঁচিল উঁচু করার কথা বলেছিল শাকিল। যাতে ভেতরে কি হচ্ছে দেখতে না পাওয়া যায়। এমনকি কদবেল গাছের পেছনের চারপাশে কাপড় টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে সময় রাজিয়া বাড়ির বাইরে বের হলে বোরখা পরেই বেরতো।
এরপর দুজনেই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। মাঝে মধ্যে এলেও থাকত না। ২০১০ সালে ভোটার কার্ডের জন্য ফের এই দম্পতি বারবাকপুরে গিয়ে কয়েকদিন ছিল। আজিজুল গাজি স্থানীয় সিপিএমের এক সদস্যর কাছে শাকিলকে নিজের ছেলে পরিচয় দেয়। শাকিলের ভোটার কার্ড হয়। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কান্ডের পর পুলিশ, সি আই ডি, এন আই এ বারবাকপুরে আসে। প্রথমদিকে রাজিয়ার জ্যাঠতুতো দাদা রফিকুল বা আজিজুল গাজি বাড়িতে না থাকলেও পরে তারা গোয়েন্দাদের সহায়তা করে। বেশ কিছু জায়গার রফিকুলের মাদ্রাসাতেও তল্লাসি হয়।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মানসিক ভারসাম্যহীন নাবালিকাকে গুনিনের কাছে রেফার করলেন সরকারি চিকিৎসক!]

বছর চারেক আগে আজিজুল গাজি মারা যায়। প্যারলে বাড়িতে আসে রাজিয়া। যাকে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে ঘাম ছুটে যেত। কিছুতেই মুখ খুলত না সে। তার স্বামী শাকিল গাজির মৃতদেহ গ্রামে আনার বিষয়ে তার আত্মীয়রা বলেছিলেন, ‘ও জঙ্গি। ওর দেহ আমরা আনব না।’ শুক্রবার কলকাতায় যখন খাগড়াগড়কাণ্ডের সাজা ঘো,ণা হচ্ছে, তখনও বারবাকপুর থেকে রাজিয়ার হয়ে কেউই যায়নি। সকলেই দায়ী করছেন বাংলাদেশি শাকিলকেই। মেয়েটা সংশোধনাগার থেকে  ছাড়া পাওয়ার পর ফের আগের মতো হয়ে যাবে বলে আশাবাদী তাঁরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement