ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: বিদেশেও যাননি। ভিন রাজ্যের কোনও লোকের সঙ্গেও মেশেননি। তা সত্ত্বেও বেলঘরিয়ার ফাস্ট ফুড বিক্রেতার শরীরে নোভেল করোনার সংক্রমণ হয়েছিল। আর তার জন্য সাধারণ মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের দিকেই আঙুল তুলছেন তাঁর মেয়ে। বুধবার সকালে বেলঘরিয়ার বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বছর আটান্নর ওই প্রৌঢ়ের।
গত ২৬ মার্চ জ্বর নিয়ে ওই হাসপাতালে ভরতি হন প্রৌঢ়। মঙ্গলবার তাঁর লালারসের নমুনায় নোভেল করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে। এদিন সকাল ৯টা ২৫ নাগাদ তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। কীভাবে তিনি সংক্রমিত হয়েছেন তা নিয়ে ধন্দে স্বাস্থ্য দপ্তর। কারণ, ওই প্রৌঢ়ের পরিবারের লোকেরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক অতীতে বিদেশ তো দূর, অন্য রাজ্যেও যাননি তিনি। আত্মীয় পরিজন যাঁদের সংস্পর্শ এসেছেন, তাঁদেরও বাইরে যাওয়ার ইতিহাস নেই। তাই ওঁর সংক্রমণ স্টেজ থ্রির দিকে ইঙ্গিত করছে কি না, তা ভেবে চিকিৎসক মহল উদ্বিগ্ন।
মৃতের মেয়ে জানিয়েছেন, লকডাউন ঘোষণা হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই তাঁর বাবা বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ২৩ মার্চ ডায়ালিসিসের জন্য বেলঘরিয়ার ওই বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেদিন রাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। গোড়ায় বাড়ির লোকজন এটাকে ডায়ালিসিসজনিত কিছু উপসর্গ ভেবেছিলেন। কিন্তু পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ২৬ মার্চ ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাঁকে। চিকিৎসকের সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে আইসোলেশনে রাখা হয়। পরে লালারসের পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তিনি করোনায় আক্রান্ত।
বাবার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ওই তরুণী। তাঁর অভিযোগ, পাড়ার লোকজনের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, তাঁর বাবাই দোষী! যেন তিনি রোগ চারধারে ছড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আসলে বিষয়টা উলটো বলে মেয়ের দাবি। ওঁর কথায়, “সরকার বারণ করা সত্ত্বেও মানুষ দোকানে দোকানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। চুটিয়ে বাজার করছেন। একবারও ভাবছেন না এটা কত বড় বিপদ ডেকে আনছে। এভাবেই তো সামাজিক সংক্রমণ হয়। আমার বাবাও তারই বলি হলেন।” তিনি আরও বলেন, “আমার বাবা বিদেশেও যাননি, অন্য রাজ্যের কোনও লোকের সংস্পর্শেও আসেননি। এই এলাকা থেকেই তাঁর শরীরে ভাইরাস ঢুকেছে।” তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, “আমার বাবা তো চলে গেলেন, মানুষ যদি এখনও না বোঝে তাহলে আরও কত প্রাণ যাবে তার ঠিক নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.