বিপ্লবচন্দ্র দত্ত,কৃষ্ণনগর: মা-মেয়ের মিলন। ফেসবুকের মাধ্যমেই নিখোঁজ অসুস্থ মাকে ফিরে পেলেন মেয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় একটি পোস্ট এবং মায়ের ছবি দেখে মেয়ে সবটা বুঝতে পারা মাত্রই হাসপাতালে ছুটে গিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। নদিয়ার কৃষ্ণনগরের এই ঘটনা জেনে সকলেই সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতার কথা আবারও একবাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন।
নদিয়ার কোতোয়ালি থানা এলাকার জাভার বাসিন্দা গীতা বিশ্বাস নামে ওই বৃদ্ধার বয়স সত্তর পেরিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, বাড়ি থাকা সত্ত্বেও তিনি পথেঘাটে ঘুরে বেড়ান। কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীনও। কেউ খাবার দিলে খান, নইলে সারাদিন না খেয়েই কেটে যায়। অভিযোগ, ছেলে, পুত্রবধূ, নাতিনাতনিরা জোট বেঁধে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। আর তাতেই তাঁর এমন অবস্থা।
প্রতিবেশীরা বলছেন, একসময় গীতাদেবীর ছিল সুখের সংসার। স্বামী বেঁচে থাকা অবস্থায় তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সুখেই দিন কাটত। কিন্তু স্বামীর মৃ্ত্যুর পর তাঁর জীবনে নেমে আসে কঠিন সময়। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্বামীর তৈরি করা ভিটেয় ছেলে পরিবার নিয়ে থাকেন। তাঁদের সঙ্গেই জীবনের বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দেওয়ার ভাবনা ছিল গীতা দেবীর। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস! বৃদ্ধা মা ছেলের কাছে বোধহয় একটু বোঝাই হয়ে গিয়েছিলেন। তাই বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয় তাঁকে। এমন আঘাতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তাঘাটে ঘুরতে থাকেন গীতাদেবী। কেউ খাবার দিলে খান, নচেৎ অভুক্তই থাকেন দিনভর। ছেলে মায়ের কোনও খোঁজই নেন না বলে অভিযোগ।
শনিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ কৃষ্ণনগর স্টেশন অ্যাপ্রোচ রোডের ধারে এমন উদভ্রান্ত-আলুথালু বেশেই পড়েছিলেন গীতাদেবী। শরীরে কোনও চলন ক্ষমতাই ছিল না। সেসময় ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন কৃষ্ণনগরের নেদেরপাড়ার যুবক সূর্য বন্দ্যোপাধ্যায়। পেশায় আইনজীবী সূর্যর সঙ্গে ছিলেন আরও দু,একজন। তাঁদের সকলের নজর পড়ে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা ওই বৃদ্ধার উপর। তাঁরাই গীতাদেবীকে উদ্ধার করে
শেষপর্যন্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। সূর্য বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘আমরা চেম্বার শেষ করে বাড়ি ফিরছিলাম। রাস্তার ধারে ওনাকে পড়ে থাকতে দেখি। এগিয়ে যাই, ডাকাডাকি করি। কিন্তু ওনার চোখেমুখে ছিল একরাশ আতঙ্কের ছাপ। এরপর জল ও কিছু শুকনো খাবার দেওয়ার পর কিছুটা সম্বিৎ ফেরে ওনার। তড়িঘড়ি খবর দি কোতোয়ালি থানার পুলিশকে।’ পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সহায়তায়
শক্তিনগর হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করা হয়।
গোটা বিষয়টি ভিডিও করে রেখেছিলেন সূর্য। সেই ভিডিও সমেত সমস্ত ঘটনার বিবরণ লিখে ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি। পরেরদিন সকালে তাঁর বন্ধু জানান, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাঁর উদ্যোগ সার্থক। পোস্টের জবাব মিলেছে। গীতাদেবীর এক মেয়ে চায়না মণ্ডল পোস্টটি দেখে নিজের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে গিয়েছেন হাসপাতালে, মায়ের কাছে। চায়নাদেবীর ছেলে জয়ন্তর কথায়, ‘আমার দিদা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। মামা দিদাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।বাড়িতে ঢুকতে দেয় না। বেশ কিছুদিন ধরে দিদার কোনও খোঁজও পাইনি। ফেসবুকে আমরা দিদার কথা জানতে পারি। জানার পরই শক্তিনগর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার পর দিদাকে আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। দিদাকে ফেরত পেয়ে খুশি হয়েছেন আমার মা। আমরাও খুশি।’ ভবঘুরের জীবন থেকে বেরিয়ে বৃদ্ধা গীতাদেবী এবার মেয়ের কাছে শান্তিতে দিন কাটাবেন। তাঁর এই পরিণতিতে খুশি সূর্যও। তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফেসবুককে, এভাবে প্রিয়জনদের মিলিয়ে দেওয়ার জন্য।
ছবি: সঞ্জিত ঘোষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.