ব্রতীন দাস: দশম দিনে পড়ল পাহাড়ের বনধ। এখনও বহাল অচলাবস্থা। রাস্তাঘাট শুনশান। সর্বত্র মোতায়েন পুলিশ ও সেনাকর্মীরা। এর মাঝেই আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে মোর্চা সমর্থকরা। এবার তারা ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। সিকিম, গ্যাংটকের সঙ্গে সংযোগকারী এই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে হাজার হাজার পর্যটক অসুবিধায় পড়বেন। এদিকে ২৩ তারিখই ছুটি পড়ে যাচ্ছে পাহাড়ের বোর্ডিং স্কুল গুলিতে। কেমন করে পড়ুয়াদের বাড়ি নিয়ে আসবেন? চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা। পাহাড়ের অশান্ত পরিস্থিতির জন্য নাম না করে সুরন্দির সিং আলুওয়ালিকে একহাত নিয়েছে তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করার দাবি জানিয়েছেন।
[কাশ্মীরে জঙ্গি অভিযানে বড়সড় সাফল্য সেনার, নিকেশ ২ হিজবুল সদস্য]
পরিস্থিতি সামাল দিতে ২২ তারিখ শিলিগুড়ির সার্কিট হাউসে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু মোর্চা ও সহযোগী আঞ্চলিক দলগুলি এই বৈঠকে যোগ দিতে অস্বীকার করেছে। মোর্চার দাবি, পাহাড় থেকে সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত চলতে থাকবে এই বনধ। ইতিমধ্যেই মঙ্গলবার দার্জিলিংয়ের জিমখানা ক্লাবে একটি সর্বদলীয় বৈঠক সেরে ফেলেছে মোর্চা। তৃণমূল ও বামফ্রন্ট ছাড়া প্রায় সব আঞ্চলিক দলই তাতে শামিল হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হরকা বাহাদুর ছেত্রীর জন আন্দোলন পার্টি এবং মদন তামাংয়ের দল অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগও। প্রসঙ্গত, মদন তামাংয়ের হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত বিমল গুরুং-সহ একাধিক মোর্চা নেতা। কিন্তু জানা গিয়েছে, জিটিএ ছেড়ে গুরুংদের বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছে প্রায় সব ক’টি আঞ্চলিক দলই।
আগামী ২৪ তারিখ ফের বৈঠকে বসতে চলেছে মোর্চা ও সহযোগী দলগুলি। তারপর থেকে আর মোর্চার হাতে আন্দোলনের রাশ থাকবে না। তার বদলে তৈরি হবে একটি কোর কমিটি। তার সদস্যরাই ভবিষ্যতে আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করবে। ২২ ও ২৪-এর দুই বৈঠকেই যোগ দিতে অস্বীকার করেছে বামফ্রন্ট। গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে কোনওভাবেই সমর্থন করা হবে না বলেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
[সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আরজি খারিজ, বহাল থাকছে কারনানের সাজা]
এদিকে, লাগাতার বনধের জেরে পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসায় বিপুল ক্ষতি হয়েছে। জুন মাসের হিসেবের নিরিখেই ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। অশান্ত পাহাড়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না কোনও গাড়ি। ফলে খাদ্যের ভাণ্ডারে টান পড়েছে। কিন্তু নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় মোর্চা সমর্থকরা একের পর এক তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই তিস্তা থেকে গাড়ি নিয়ে আসার পথে এক ট্রাকচালককে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়। অভিযোগ উঠেছে কিছু মোর্চা সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই চালক। দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক জয়শি দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ দিয়ে এসকর্ট করে পাহাড়ে খাবার পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। পাহাড়ের পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল। দার্জিলিংয়ের অশান্তির জন্য সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াকে নিশানা করেছে শাসক দল। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, বিজেপির এক মন্ত্রী দার্জিলিংয়ের বসে যে ভাষায় কথা বলছেন তা সংবিধানকে লঙ্ঘনের শামিল। তিনি উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন। ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লোকসভার সদস্য পদ ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পার্থ। নবান্নে সূত্রে খবর, পাহাড়ে বনধের দিন যারা অফিসে যাননি তাদের বেতন কাটা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.