ব্রতীন দাস : দার্জিলিংয়ের অশান্তির আঁচ এবার মিরিকে। সোমবার মোর্চার তাণ্ডবে জ্বলল এই শৈলশহর। মৃত্যু হল একজনের। নিহতকে দলীয় সমর্থক দাবি করে পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ এনেছে মোর্চা। পুলিশ অবশ্য তা মানতে চায়নি। অভিযোগ বেছে বেছে তৃণমূল কাউন্সিলর, কর্মীদের বাড়ি ঘেরাও করে মোর্চা সমর্থকরা। তৃণমূল প্রতিরোধ করলে দু’দল সমর্থকদের মধ্যে গণ্ডগোল বাধে। অশান্তি সামলাতে হিমশিম খায় পুলিশ। কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ব্যবহার করা হয়। পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় গভীর রাতে তলব করা হয় সেনাকে।
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে এক মাসের বেশি ধরে আন্দোলন। অভিযোগ, মোর্চার গা-জোয়ারি, শাসানিতে কালিম্পং পুরসভার দুই তৃণমূল কাউন্সিলর দল ছেড়েছেন। দার্জিলিং পুরসভাতেও শাসক দলকে শূন্যে নামিয়েছে মোর্চা। এবার তাদের টার্গেট মিরিক। ৬ কাউন্সিলর নিয়ে মিরিক পুরসভা এখন তৃণমূলের। যেনতেন প্রকারে মিরিক বোর্ড দখল করতে গত কয়েক দিনে নানা চাল দিয়েছে মোর্চা। চেয়ারম্যান লালবাহাদুর রাই ও ভাইস চেয়ারম্যান এম কে জিম্বার বাড়িতে আগেই হামলা হয়। ঘাসফুল প্রতীকে জিতে আসা জনপ্রতিনিধিদের ওপর চাপ আরও বাড়াতে সোমবার মিরিকজুড়ে দিনভর তাণ্ডব চালায় মোর্চা। মাইকিং করে হুমকি দেওয়া হয় তৃণমূল কাউন্সিলররা ইস্তফা না দিলে বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে। মিরিকের কৃষ্ণনগর এলাকায় পুলিশ বুথ পোড়ানোর মধ্যে দিয়ে হিংসা শুরু হয়। এরপর চেয়ারম্যানের ওয়ার্ডে কয়েক হাজার মোর্চা সমর্থক বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। চেয়ারম্যানকে ইস্তফা দিয়ে মোর্চার আন্দোলনে যোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। তৃণমূল কর্মীরা এর প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এই সময় নবরাজ তামাং নামে এক তৃণমূল কর্মী বাড়ি ফিরছিলেন। ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কোপানো হয়। শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নবরাজকে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট ছোড়ে। এই সময় এক মোর্চা সমর্থকের মৃত্যু হয়। মোর্চার দাবি পুলিশের গুলিতে আশিস তামাং মারা যান। তবে পুলিশ পাল্টা দাবি করে কোথাও গুলি চলেনি। মিরিকে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা হয়। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর হয়। দুই সিআরপিএফ জওয়ান জখম হন। অবস্থা কার্যত আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ায় গভীর রাতে সেনাবাহিনী তলব করা হয়। গরুবাথানের ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে অফিস ও মাটি সংরক্ষণ কেন্দ্রের অফিসেও ছিল মোর্চার নিশানায়। এলাকার বাসিন্দারা পঞ্চায়েত অফিসের আগুন নেভান। মাটি সংরক্ষণ কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ নথি ভস্মীভূত হয়েছে।
পাহাড়ের এই পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার রোশন গিরির নেতৃত্বে দিল্লি যায় মোর্চার এক প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার গোর্খাল্যান্ড মুভমেন্ট কোঅর্ডিনেশন কমিটির বৈঠক। এই কর্মসূচির আগে কেন মোর্চা আলাদা ভাবে দিল্লি গেল তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বৈঠকে এই নিয়ে তোলপাড় হওয়ার সম্ভাবনা। জিএনএলএফের সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্র ছেত্রী জানিয়েছেন, মোর্চা আলাদাভাবে এগোতে চাইলে তারাও পৃথক কর্মসূচি নেবেন।এই বৈঠকের আগে কালিম্পংয়ের ১৭ মাইলে পঞ্চায়েত অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মোর্চার বিরুদ্ধে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.