ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় এল সুখবর। হাসি ফুটল পাহাড়বাসীর মুখে। অচলাবস্থার ১০৪ দিন কাটিয়ে বোধনের দিন সন্ধ্যায় এল বহু প্রতীক্ষিত বার্তা। বুধবার ভোর ৬টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উঠে যাচ্ছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ডাকা বনধ। ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে পাহাড়। স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও। মোর্চার সহকারী সাধারণ সম্পাদক জ্যোতি রাই মঙ্গলবার জানিয়েছেন, টেলিফোনে মোর্চা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সর্বসম্মতিক্রমে বনধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্মতি জানিয়েছেন মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংও। তবে গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে যে তাঁরা সরছেন না, সেটাও জানিয়েছেন মোর্চা নেতারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চাপের মুখে পড়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হল বিমল গুরুংকে। কেন্দ্রের তরফে আলোচনার প্রস্তাবকে হাতিয়ার করে ‘মুখরক্ষা’ করলেন মোর্চা নেতারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মোর্চা নেতাদের স্পষ্ট বার্তা দেন, কোনও দাবিদাওয়া থাকলে আলোচনাই একমাত্র পথ। হিংসার পথে হেঁটে, পাহাড়কে অচল করে রেখে কোনও দাবি আদায় করা যাবে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে মোর্চা নেতাদের বৈঠকে বসার প্রস্তাবও দেন রাজনাথ। আর তারপরই মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বনধ প্রত্যাহারের সুখবর পাওয়া গেল। সপ্তমীর সকাল থেকেই চেনা ছন্দে দেখা যাবে পাহাড়কে। তবে বিমল গুরুংয়ের সামনে এই সিদ্ধান্ত না নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। কারণ, পুজোর মুখে স্বাভাবিক ছন্দেই ফিরতে শুরু করেছিল পাহাড়। বিভিন্ন জায়গায় খোলে দোকানপাট। সচল হয় পরিবহণ। স্বাভাবিক কাজকর্ম হয় কালিম্পং পুরসভা-সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরেও। খুলেছে চা-বাগানও।
তবে পাহাড়কে স্বাভাবিক করতে কার্যত ‘মাস্টারস্ট্রোকটি’ খেলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে সর্বদল বৈঠকে পর বহিষ্কৃত মোর্চা নেতা বিনয় তামাং বনধ প্রত্যাহারের ডাক দিলেও, মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুংয়ের লাগাতার হুমকিতে কিছুতেই যেন স্বাভাবিক ছন্দ ফিরছিল না পাহাড়ে। এই পরিস্থিতিতে বিনয় তামাংকে চেয়ারম্যান করে পাহাড়ের জন্য নয়া বোর্ড গড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান মোর্চার আর এক বহিষ্কৃত নেতা অনীত থাপা। এরপরই পাহাড়ের পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করে। গত শনিবার বৈঠক করে রবিবার থেকে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত নেন দার্জিলিং শহরের ১৯টি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এর জেরেই প্রায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসে পাহাড়ে। মঙ্গলবার সকালেও দার্জিলিং শহর-সহ পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় খুলেছে বেশিরভাগ দোকানই। দার্জিলিং-শিলিগুড়ি রুটে ফের চালু হয়েছে যানবাহন চলাচল। কালিম্পং পুরসভা-সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরেও কর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকী, প্রশাসনের সাহায্যে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে বেশ কয়েকটি চা-বাগানেও। পরিস্থিতি টের পেয়ে মোর্চা নেতারা বিলক্ষণ বুঝতে পারেন, আর বনধ টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে না। তাই শেষমেষ বুধবার ভোর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বনধ প্রত্যাহার হচ্ছে পাহাড়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.