ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: পাহাড়ে মোর্চার লাগাতার হিংসার জেরে টয়ট্রেনের ‘হেরিটেজ’ তকমা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউনেস্কো। একই সঙ্গে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলের একের পর এক ঐতিহ্যবাহী স্টেশন যেভাবে পোড়ানো চলছে, তাতে রীতিমতো ‘ডেঞ্জার জোন’-এ শৈলরানির সাধের ‘খেলনা রেল’। ইতিমধ্যে এনিয়ে ইউনেস্কো-সহ রেল ও কেন্দ্রের পর্যটনমন্ত্রককে চিঠি দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার তরফে। মোর্চার ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের জেরে এবারের পুজোয় পাহাড় পর্যটনে ঘোর বিপর্যয়। ফি বছরের মতো এবার পুজোতেও আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, জার্মানি-সহ বিভিন্ন দেশের প্রচুর পর্যটকের দার্জিলিংয়ে বুকিং ছিল। তা বাতিল হতে শুরু করেছে। কার্যত হাল ছেড়ে দিয়েছেন টুর অপারেটররা।
এদিকে, এবার পাহাড়ে পুড়িয়ে দেওয়া হল শতাব্দী প্রাচীন কার্শিয়াংয়ের রাজরাজেশ্বরী হল। মঙ্গলবার রাতে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ঐতিহ্যবাহী ওই ভবনটিতে। পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে সেটি। একইসঙ্গে আগুন লাগানো হয়েছে কার্শিয়াং টুরিস্ট লজে। রান্নাঘর-সহ সেটির বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পোড়ানো হয়েছে দার্জিলিংয়ের কাগে গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়৷ আগুন দেওয়া হয়েছে দার্জিলিংয়ের মালগুদাম এলাকায় তৃণমূল কার্যালয়ে।
অন্যদিকে, মোর্চার পর পর হামলার জেরে মিরিকে এসডিও অফিস চলছে থানায়। মহকুমাশাসক, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট-রা থানায় বসেই প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন। মঙ্গলবার দেহ নিয়ে মিছিল থেকে হামলা চালিয়ে মিরিক বিডিও অফিস ভাঙচুর করে মোর্চার বাহিনী। অফিসের সামনে লাগানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা থেকে জানলার কাচ, দরজা সবই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে অসুরক্ষিত হয়ে পড়েছে অফিসটি। এদিন সকালে সেখান থেকে কম্পিউটার-সহ গুরুত্বপূর্ণ নথি সরিয়ে বিডিও-র বাংলোয় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মোর্চার হামলার জেরে মিরিক পুরসভাতেও কাজ বন্ধ। সেখানে কর্মীরা যেতে ভয় পাচ্ছেন৷
তৃণমূলের চেয়ারম্যান লাল বাহাদুর রাইয়ের উপর মোর্চার সশস্ত্র হামলার ছক রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। মিরিকে বড়সড় হামলার জন্য নেপাল থেকে প্রচুর লোক ভাড়া করে আনা হয়েছে বলেও খবর এসেছে প্রশাসনের কাছে। প্রতিটি জায়গায় হামলার ক্ষেত্রে এতদিন বোতল, পেট্রোল বোমা ব্যবহার করছিল মোর্চা। তবে মঙ্গলবার রাতে মিরিকে বেশ কয়েকটি হাত বোমা ছোড়া হয়। তার মধ্যে দু’টি ফাটেনি। বোমাগুলি এলাকাতেই তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। কিন্তু কোথায় ওই বোমা তৈরি করা হচ্ছে না কি নেপাল থেকে ঢুকছে, তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। নেপাল ও ভুটান সীমান্তে শুরু হয়েছে কড়া নজরদারি। পাহাড়ে জেলাশাসকের দপ্তর-সহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে পানীয় জলের লাইন কেটে দিয়েছে মোর্চা। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী যাতে জল, খাবার না পায়, সেই চেষ্টা চলছে। ফলে পুলিশের গাড়িতে ড্রাম ভর্তি করে এখন পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে সোসাইটির ইন্ডিয়া চ্যাপ্টারের সম্পাদক রাজ বসু বলেছেন, এশিয়ার প্রথম রেলওয়ে হেরিটেজ দার্জিলিংয়ের টয়ট্রেন গোটা বিশ্বে দ্বিতীয়। অষ্ট্রিয়ার সিমেরাংয়ের পর। সোনাদা, গয়াবাড়ি স্টেশন কিংবা ডিএইচআর-এর হেড কোয়ার্টার অ্যালিশিয়া বিল্ডিং যেভাবে পোড়ানো, ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে, দেশের গর্বকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, হেরিটেজের নিরিখে তাজমহল ও দার্জিলিং হিমালয়ান রেল সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি নিয়ে আমরা কেন্দ্রের পাশাপাশি ইউনেস্কোকে চিঠি দিয়েছি। এভাবে চললে দার্জিলিংয়ের টয়ট্রেন তো ডেঞ্জার জোনে চলে যাবে। বিষয়টি নিয়ে ইউনেস্কো প্রতিনিধিরাও উদ্বিগ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.