তরুণকান্তি দাস: জিম্বা। বেঁটেখাটো, গোলগাল চেহারা। জেল লাগানো চুল ব্যাকব্রাশ করা। আস্তে হাঁটেন। আরও আস্তে কথা বলেন। পাহাড়ের অস্থিরতার সময় তাঁকেই চাণক্য বলা হত। এখন তিনি বিধানসভায়। তাঁর কথায় যেন বিস্ফোরণের আভাস। “আমার হাতে ঘিসিং, এখন হৃদয়ে মোদি” বলেই হাসতে থাকেন তিনি। জিম্বা। নীরজ জিম্বা। ডান হাতে ফুটে উঠেছে তাঁর প্রিয় নেতা সুবাস ঘিসিং। তাঁর মুখ ট্যাটু করাতে খরচ করেছেন কয়েক হাজার টাকা।
সদ্য বিধানসভায় এসেছেন। সময়ের ডাক এবং পাহাড়ের চাহিদা মেনে তিনি এখন পদ্মে। হারিয়েছেন জিটিএ-র চেয়ারম্যান, তৃণমূলের টিকিটে লড়া একদা বন্ধু বিনয় তামাংকে। বিধানসভায় এসে বাংলা বুঝতে পারছেন না। খুঁজছেন বাংলার শিক্ষক। “আসলে বাংলাটা না জানলে এখানে কাজ করা মুশকিল। বিধায়ক, মন্ত্রীরা কত কথা বলছেন। বুঝতে পারছি না। তাই বাংলাটা শিখতেই হবে।” সদ্য মোর্চা বিধায়কদের জন্য যে ঘর বরাদ্দ হয়েছে বিধানসভায়, সেখানে বসে অকপট স্বীকারোক্তি তাঁর। এমএলএ হস্টেলে ঠাঁই মিলেছে। হস্টেলের লাগোয়া কিড স্ট্রিটে রোজ সকালে কয়েকচক্কর দৌড়। সেই কথা তুলে ধরে বিধানসভায় বসে তিনি বলেন, “পাহাড়ের ঠান্ডা আবহাওয়া, কুয়াশার আমেজে আমাদের দিন কাটে। এখানে বড় গরম। কিন্তু শরীরটা তো রাখতে হবে।”
শরীরটা না হয় থাকল। কিন্তু দল? এখন আপনি কোন দলে? অবস্থানটা কী? পাহাড়ে বছর দুয়েক আগে আগুনে আন্দোলনে আপনি ছিলেন চাণক্য। জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম নেতা হয়েও যৌথ আন্দোলনের রূপরেখা বানাতেন বিমল গুরুং আত্মগোপন করার পর। এখন? “আমার ডিএনএ হল জিএনএলএফ। সুবাস ঘিসিংয়ের শিষ্য আমি। এখনও দলেই আছি।” বলেই হাতের সদ্য করানো ট্যাটু দেখান আইনজীবী জিম্বা। সেখানে ফুটে উঠেছে ঘিসিংয়ের মুখ। ইয়া বড়। একবার চোখ পড়লেই চেনা যায়। তাহলে আপনাকে ট্যাটু দিয়ে যায় চেনা? প্রশ্নের মুখে হেসে ওঠেন জিএনএলএফ নেতা থেকে বিজেপির বিধায়ক হয়ে ওঠা জিম্বা। উত্তর দেন, “দেখুন বিজেপি হল সময়ের দাবি। পাহাড়ের চাহিদা পূরণের অস্ত্র। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমার হৃদয়ে। পাহাড় তাঁর দিকে তাকিয়ে। যদি দাবি পূরণ হয়।”
তারপর ব্যাখ্যা দেন, “আসলে আমরা চেয়েছিলাম খুকরি চিহ্নে লড়তে। কিন্তু তা নিশ্চিত ছিল না। তা ছাড়া বিজেপি শর্ত দিয়েছিল, ওদের প্রতীকে লড়তে হবে। আমরা রাজি না হলে গুরুংপন্থী মোর্চা, সিপিআরএম, গোর্খা লিগ বা পাহাড়ের কোনও দল সম্মতি দিত। সুযোগ হাতছাড়া হত আমাদের। তাই পদ্ম নিয়ে লড়াই। এবং দুই নৌকায় পা রেখেই বিধানসভায়।” সত্যি চাণক্য বছর উনচল্লিশের যুবক। যিনি জ্যোতি বসুর জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে টুইট করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নকে সমীহ করেন। যিনি ঘিসিংয়ের দলে থেকেও বিজেপির সদস্যপদ নিয়ে বসে আছেন। এবং পাহাড়ের চাহিদা মেনে গড়া নতুন সমন্বয় কমিটির মাথায় বসে কয়েকদিনের মধ্যে দিল্লি যেতে চলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলতে। সেখানেও চাণক্যগিরি চলবে তাঁর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.